নিজস্ব প্রতিনিধি: মণিপুরের অমানবিক ঘটনায় স্তম্ভিত গোটা দেশ। যে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে সেখানে তার প্রতিবাদে সরব হয়েছে দেশের মানুষ। দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে ঘোরানো হচ্ছে, যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে, এক মহিলার চোখের সামনে তাঁর কিশোর ভাইকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে, একটি সভ্য দেশে এমনটা যে হতে পারে তা সবার কল্পনার বাইরে ছিল। এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই দেশবাসী শিউরে উঠেছেন। স্বাভাবিকভাবেই মণিপুরে আশি দিনের বেশি সময় ধরে যে রক্তক্ষয়ী পরিবেশ তৈরি হয়েছে তার নিন্দা করছে সবাই।
এই আবহের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মালদায় দুই আদিবাসী মহিলাকে বিবস্ত্র করে ঘোরানোর পাশাপাশি তাঁদের মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকী তাঁদের জুতোপেটা করা হয় বলেও অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই দুই মহিলার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ উঠেছে বলেই তাঁদের এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা মালদায় দুই মহিলাকে পুলিশের সামনেই নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। কয়েক মাস আগেই উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করার অভিযোগ ওঠে। হাওড়ার পাঁচলায় পঞ্চায়েত ভোটের দিন বুথের মধ্যেই বিজেপি এক মহিলা প্রার্থীকে নগ্ন করে তাঁর গোপনাঙ্গে হাত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যদিও রাজ্য পুলিশের ডিজি এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।রাজস্থানেও নারী নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবাদ করে মন্ত্রিত্ব খুইয়েছেন সেখানকার এক মন্ত্রী। তাই এটা স্পষ্ট লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলি রাজনৈতিক দলের কাছে অন্যতম প্রধান ইস্যু হয়ে উঠছে।
নরেন্দ্র মোদি সরকারের ‘বেটি পড়াও বেটি বাঁচাও’ প্রকল্প বিজেপির প্রচারের অন্যতম বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। সেই জায়গায় বিজেপি শাসিত মণিপুরে এতদিন ধরে যে হিংসা চলছে, আর তাতে প্রাণ হারাচ্ছেন বহু মহিলা, নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সের মহিলারা, তাতে মুখ পুড়ছে গেরুয়া শিবিরের। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে আসরে নেমে পড়েছে বিরোধীরা। মনে রাখতে হবে দেশে পুরুষ ও মহিলা ভোটারের সংখ্যায় খুব বেশি তফাৎ নেই। সেই জায়গা থেকে মণিপুরে নারী নির্যাতনের ঘটনা নিঃসন্দেহে অস্বস্তি বাড়িয়েছে বিজেপির। অন্যদিকে মণিপুরের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ বাংলাতেও পরপর নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে ঘোরানোর সঙ্গে মালদার বামনগোলার ঘটনার যথেষ্ট মিল পাওয়া যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই মালদার ঘটনা নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তাই এটা স্পষ্ট লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে নারী সুরক্ষার বিষয়টি অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠবে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে। যদিও নারী নির্যাতন সম্পূর্ণ বন্ধ করতে পেরেছে এমন দাবি কোনও রাজনৈতিক দলই করতে পারছে না। কমবেশি এই নারী নির্যাতনের ঘটনা প্রত্যেকটি রাজ্যেই ঘটছে। তাই লোকসভা নির্বাচন আরও এগিয়ে এলে ভোটের টানে নারী নির্যাতন সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করতে রাজ্যগুলি আরও কঠোর পদক্ষেপ করে কিনা সেটাই দেখার।