অভিষেক কি ক্রমশ ‘কন্ট্রোলের’ বাইরে চলে যাচ্ছেন? আগামী দিনে কি সমস্যা বাড়বে তৃণমূল সুপ্রিমোর?

অভিষেক কি ক্রমশ ‘কন্ট্রোলের’ বাইরে চলে যাচ্ছেন? আগামী দিনে কি সমস্যা বাড়বে তৃণমূল সুপ্রিমোর?

কলকাতা:  তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক মন্তব্যে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। একুশে জুলাইয়ের ‘শহিদ দিবস’ সমাবেশ থেকে যেভাবে তিনি রাজ্য বিজেপির সর্বস্তরের নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করতে বলেছেন তাতে স্তম্ভিত সব মহল। এতে যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হবে সেটা ভাল করেই বুঝতে পারছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই তিনি সেদিন অভিষেকের মন্তব্যের পরেই বিষয়টিকে কিছুটা লঘু করে কর্মসূচিতে কিছুটা রদবদল করে দিয়েছেন।

মানবাধিকার সংগঠন ‘এপিডিআর’ বিষয়টিকে চরম অগণতান্ত্রিক, মানবতাবিরোধী ও বিপজ্জনক বলে বর্ণনা করেছে। শনিবার এপিডিআর-এর সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূরের একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে  বলা হয়েছে, “শাসক দলের এই তালিকা তৈরি আমাদের জার্মানিতে হিটলারের সময় খুঁজে খুঁজে ইহুদিদের তালিকা তৈরির কথা মনে করিয়ে দিল। এভাবে ভিন্ন চিন্তার রাজনৈতিক কর্মীদের দাগিয়ে দেওয়া এবং পরিবার পরিজন-সহ তাঁদের বাসস্থানকে ঘেরাও করা মারাত্মক ব্যাপার।”

একশো দিনের কাজের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাকে দিচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলে  অভিষেক শুক্রবার বলেছেন, ‘‘৫ আগস্ট সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত  বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করে রাখবেন! একদম গণঘেরাও। বাড়ির কেউ বয়স্ক থাকলে তাঁকে ছেড়ে দেবেন। আর কাউকে ঢুকতেও দেবেন না, বেরোতেও দেবেন না।’’ বকেয়া টাকা আদায় করতে এই নিদান দেন তিনি। যদিও এরপর বক্তৃতা করতে উঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেকের আগ্রাসনে কিছুটা লাগাম পরিয়ে বলেন, ‘‘অভিষেক ৫ আগস্ট একটা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।  কিন্তু আমি বলব, ওটা ব্লকে ব্লকে করা হোক। শান্তিপূর্ণ ঘেরাও করো। বাড়ি থেকে একশো মিটার দূরে। ভোটের সময় যেমন বুথের একশো মিটার দূরে জমায়েত করা যায়। যাতে কারও ঢুকতে-বেরোতে অসুবিধা না-হয়।’’

রাজনৈতিক মহল মনে করে যে কোনও বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গেলে শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্বের সংযম বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। স্বাধীন গণতন্ত্রে এটাই দস্তুর। যা অভিষেক মানছেন না বলেই রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন। আর সেই সূত্রে অভিষেকের বক্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে রাজ্যজুড়ে।

তবে এই প্রথম নয়। কিছুদিন আগেই কলকাতা হাইকোর্টের এক বিচারপতির নাম করে তাঁকে নজিরবিহীন ভাবে আক্রমণ করেছিলেন অভিষেক। যে বিষয়টি নিয়ে অভিষেকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন একাধিক আইনজীবী। গত বছরের  নভেম্বরে বিজেপির নবান্ন অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। তাতে একাধিক পুলিশকর্মী আহত হয়েছিলেন।

এরপর এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি থাকা পুলিশকর্মীকে দেখতে গিয়েছিলেন অভিষেক। সেই  ঘটনায় পুলিশের সহিষ্ণুতার প্রশংসা করে এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, তিনি যদি পুলিশ হতেন তাহলে হামলাকারীদের কপালের মাঝখানে গুলি করে মারতেন। অভিষেকের সেই বক্তব্য নিয়ে রাজ্য জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এখানেই শেষ নয়, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর থেকে বয়সে অনেক বড় হলেও তাঁকে বহুবার তুইতোকারি করে কথা বলেছেন অভিষেক। সব মিলিয়ে ধারাবাহিকভাবে অভিষেক যেভাবে মন্তব্য করে চলেছেন তাতে রাজনৈতিক মহল মনে করছেন তিনি দলের ‘কন্ট্রোলের’ বাইরে চলে যাচ্ছেন। এতে আগামী দিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমস্যায় পড়তে হবে বলেই রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করেন। তাই একুশের সমাবেশে অভিষেক যেভাবে বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করার নিদান দেন, তাতে আইনশৃঙ্খলা জনিত সমস্যা তৈরি হতে পারে বুঝেই সেটিকে কিছুটা হলেও লঘু করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই অভিষেক আগামী দিনে ফের কোনও বিতর্কিত মন্তব্য করেন কিনা সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen + 19 =