নয়াদিল্লি: বিরোধীদের একটাই লক্ষ্য, আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে কেন্দ্র থেকে উৎখাত করা। আর সেই লক্ষ্যেই লোকসভা নির্বাচনের দশ মাস আগে একত্রিত হয়েছে ২৬টি বিরোধী দল। গঠিত হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট। বিরোধীদের দাবি ‘ইন্ডিয়া’ জোটের কাছে পরাজিত হবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘এনডিএ’ জোট। যথারীতি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে বিরোধীদের জোট এখন অন্যতম চর্চিত বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই জোট আদৌ সফল হবে তো? এর কতটা প্রভাব পড়বে লোকসভা নির্বাচনে? জোটের ফর্মুলা অনুযায়ী একের বিরুদ্ধে এক লড়াই হলে কতটা সমস্যায় পড়বে বিজেপি? এই সমস্ত প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠতে শুরু করেছে।
এই পরিস্থিতিতে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর গোটা বিষয়টি নিয়ে যা বলেছেন, তাতে নয়া জল্পনা শুরু হয়েছে। একটি অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে সম্প্রতি ভোটকুশলী পিকে বলেছেন লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটের কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই তিনি মনে করছেন। কেন তিনি একথা বলছেন তা নিয়ে একাধিক যুক্তিও পেশ করেছেন তিনি।
প্রশান্তের বক্তব্য অনুযায়ী, হাতে গরমাগরম ইস্যু না থাকলে বিরোধী দলগুলির তামাম নেতৃত্ব এক হয়ে গেলেও তাতে কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে হটানো মুশকিল হবে। এ বিষয়ে তিনি ১৯৭৭ এবং ১৯৮৯ সালের কথা তুলে ধরেছেন। সেই দুটি লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোটের কাছে পরাজিত হয়েছিল ইন্দিরা গান্ধী এবং রাজীব গান্ধীর সরকার। কিন্তু এবার সেটা সম্ভব হবে না বলেই প্রশান্ত কিশোর মনে করছেন। কিন্তু কেন? প্রশান্তের ব্যাখ্যা, ১৯৭৭ সালে নির্বাচন হয়েছিল জরুরি অবস্থার মতো ইস্যুকে সামনে রেখে। যেভাবে প্রায় দু বছর ইন্দিরা গান্ধী দেশ জুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে রেখেছিলেন তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরণ হয়েছিল ব্যালট বাক্সে।
আর বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জয়প্রকাশ নারায়ণের মতো স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রবাদপ্রতিম নেতা। যিনি ইন্দিরা গান্ধীর পরাজয়ের পরেও নিজে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হতে যাননি। প্রশান্ত কিশোর মনে করেন যদি না জরুরি অবস্থা জারি হতো তাহলে সেবার বিরোধী জোট এক হলেও ইন্দিরা গান্ধীকে হারাতে পারত না।
অন্যদিকে ১৯৮৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছিল বোফর্স কেলেঙ্কারি। তাই ভিপি সিংয়ের নেতৃত্বে বিরোধী জোট এক হয়ে পরাজিত করতে পেরেছিল রাজীব গান্ধীর সরকারকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ১৯৮৯ সালে রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস ১৯৭টি অর্থাৎ প্রায় দু’শোর কাছাকাছি আসন পেয়েছিল। তাই সেবার কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছিল একথা কিন্তু বলা যাবে না। আর সেই সূত্রেই প্রশান্ত কিশোর মনে করছেন আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোট বিজেপিকে সেভাবে কাবু করতে পারবে না।
তিনি মনে করছেন, বিরোধীদের এমন একটি ইস্যু চাই যাতে তোলপাড় হয়ে যাবে গোটা দেশ। যার মোকাবিলা করতে হিমশিম খেয়ে যাবে নরেন্দ্র মোদি সরকার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই ইস্যু বিরোধীদের হাতে নেই।
বর্তমানে মণিপুর কাণ্ড বিজেপিকে বিপাকে ফেললেও তা শীঘ্রই থেমে যাবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে। ঘটনা হল এখনও পর্যন্ত বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বড়সড় দুর্নীতির কোনও স্পষ্ট অভিযোগ সামনে আসেনি। তাই বিরোধী জোটের মোকাবিলা করতে বিজেপির তেমন অসুবিধা হবে না বলেই রাজনীতির কারবারিদের একাংশের ধারণা। আর সেই কথাই শোনা গেল ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের মুখে। এই আবহের মধ্যে লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রভাব কতটা পড়ে এখন সেটাই দেখার।