নিজস্ব প্রতিনিধি: বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র অন্যতম শরিক সিপিএম তথা বামেরা। কিন্তু সেখানে তৃণমূল থাকায় প্রশ্ন উঠেছে পশ্চিমবঙ্গে কি শাসক দলের বিরুদ্ধে সিপিএম আদৌ লড়াই করার জায়গায় রয়েছে? পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করেছেন সিপিএমের নীচুতলার কর্মীরা। সিপিএমের সন্ত্রাসে সিপিএমের বেশ কয়েকজন কর্মী-সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। নির্বাচনের দিন বুথে বুথে ভোট লুট ঠেকাতে গিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে সিপিএমের বহু কর্মী আহত হয়েছেন।
এই আবহের মধ্যে সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপিকে হটানোর লক্ষ্যে বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটে সামিল হয়েছে সিপিএমও। আর তখন থেকেই পশ্চিমবঙ্গে নীচুতলার কর্মী সমর্থকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে আলিমুদ্দিনকে। এই অবস্থায় নিজেদের ‘স্ট্যান্ড পয়েন্ট’ ফের স্পষ্ট করে দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্বে আক্রান্ত হওয়া দলের কর্মী-সমর্থক এবং স্থানীয় মানুষদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের কথা শোনার ডাক দিল আলিমুদ্দিন। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মিট দ্য ফ্যামিলি’। এ বিষয়ে সেলিম বলেছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই আগের মতোই চলবে। পশ্চিমবঙ্গ এবং সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটের কথা তুলে ধরে সেলিম বলেন, “দেশ বাঁচানোর লড়াইয়ের লক্ষ্যে ‘ইন্ডিয়া’ জোট যে প্রস্তাব নিয়েছে, দেশের জন্য যে যে বিপদের কথা বলা হয়েছে, আমাদের বাংলার জন্যেও তা খাটে। তাই বিজেপি এবং তৃণমূল, দু’দলের বিরুদ্ধেই লড়াই করবে সিপিএম৷” আর আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার পর তা নিয়ে সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবেন বলেও জানিয়েছেন সেলিম। এভাবেই ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে চাইছে আলীমুদ্দিন।
ঘটনা হল পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সাধ্যমত লড়াই চালাচ্ছেন সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরা। কিন্তু বেঙ্গালুরুতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে বসে যেভাবে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠনে সামিল হয়েছেন, তাতে বঙ্গ সিপিএমের নীচুতলায় তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন সিপিএমের কর্মী- সমর্থকরা। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে আলিমুদ্দিনের। আলিমুদ্দিনের আশঙ্কা তৃণমূলের সঙ্গে এক মঞ্চে যাওয়ায় যে ভোট বিজেপির কাছ থেকে সিপিএমের দিকে ফিরতে শুরু করেছে, তা আবার চলে যেতে পারে। অর্থাৎ লোকসভায় ফের বামের ভোট রামের দিকে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা সিপিএম নেতৃত্বের। আর সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই নীচুতলার কর্মীদের ক্ষোভের আঁচ কমাতে আসরে নামছেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএমের ভোট শতাংশ আগের চেয়ে কিছুটা হলেও বেড়েছে। সিপিএমের দাবি ভোটের দিন যদি প্রত্যেকটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকত, সুষ্ঠুভাবে ভোট হতো, তাহলে তাদের ভোট শতাংশ এবং আসন সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে যেত। সিপিএমের অভিযোগ তৃণমূল এতটাই হিংসার আশ্রয় নিয়েছে যাতে হাজার হাজার বুথে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারেননি। ব্যাপক ছাপ্পা ভোট এবং রিগিং হয়েছে বলে সিপিএমের অভিযোগ। তা সত্ত্বেও দাঁতে দাঁত চেপে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন বলে নীচুতলার কর্মী সমর্থকদের কুর্নিশ জানাচ্ছে আলিমুদ্দিন। কিন্তু কিছুটা হলেও তাল কেটে গিয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠন হওয়ায়। আর সেটাই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আলিমুদ্দিনের। তাই সেই অস্বস্তি যাতে দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যায় তার জন্য চেষ্টার কসুর করছে না ‘রেড ব্রিগেড’। দলের নীচুতলার কর্মীদের এটাই বোঝানো হবে যে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে আগের মতোই লড়াই চলবে। তবে শুধুমাত্র বিজেপি বিরোধিতার জন্যই ‘ইন্ডিয়া’ জোটে সামিল হয়েছে সিপিএম, এর বেশি আর কিছু নয়। আর সেই সূত্রেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ডাক দিয়েছেন। সেই সঙ্গে নতুন কর্মসূচিরও ঘোষণা করেছেন। এতে নীচুতলার কর্মীদের ‘ক্ষতে’ আদৌ প্রলেপ দেওয়া যাবে কিনা এখন সেটাই দেখার।