কলকাতা: বামফ্রন্ট সরকারের আমলে বুথ দখল, রিগিং, ছাপ্পা ভোট, লাগাতার সন্ত্রাস-সহ বহু অভিযোগ নিয়মিত উঠত বিভিন্ন নির্বাচনকে ঘিরে। ঘন্টার পর ঘন্টা ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েও ভোট দিতে পারছেন না বহু মানুষ, এমন অভিযোগ হামেশাই উঠে আসত। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া প্রার্থীর ফর্ম বিকৃত করে দিচ্ছেন সরকারি অফিসার, এমন অভিযোগ কোনও দিন বাম আমলে শোনা যায়নি। অর্থাৎ শাসকদলের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে সরকারি কর্তাদের একাংশ বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বিকৃত করে দিচ্ছেন যাতে তাঁরা ভোটে লড়াই করতে না পারেন, এমন অভিযোগ রাজ্যবাসী কোনও দিন প্রত্যক্ষ করেনি। অথচ এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে উলুবেড়িয়ার একাধিক শীর্ষ সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে।
এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে উলুবেড়িয়ায় সিপিএম প্রার্থীর নথি বিকৃত করার মামলায় বিডিও, এসডিও-সহ তিন প্রশাসনিক আধিকারিককে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করল কলকাতা হাইকোর্ট নিযুক্ত তথ্যানুসন্ধান কমিটি। বৃহস্পতিবার ওই কমিটির সদস্যরা কলকাতা হাইকোর্টে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন তাতে তিন আধিকারিককে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করা হয়েছে। আর এই মামলায় উলুবেড়িয়ার সংশ্লিষ্ট আসনটিতে নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আদালত জানিয়েছে, উলুবেড়িয়ার বহিরা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনটিকে শূন্য হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী আদালত তার পর্যবেক্ষণে শুনিয়েছে, উলুবেড়িয়ার এসডিও শমীককুমার ঘোষ, বিডিও নীলাদ্রিশেখর দে এবং জাতি শংসাপত্র বিভাগের অতিরিক্ত ইনস্পেক্টর কৃপাসিন্ধু সামুইয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা উচিত। ঘটনা হল উলুবেড়িয়ার সংশ্লিষ্ট আসনটি ওবিসি সংরক্ষিত। সিপিএম প্রার্থী কাশ্মীরা ওবিসি সম্প্রদায়ের। কিন্তু তদন্তের সময় তৃণমূল প্রার্থী লুৎফান্নেসা বেগম স্বীকার করে নেন, তিনি ওবিসি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত নন। অথচ মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাঁকে ওবিসি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ, তৃণমূল প্রার্থীর ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতাই নেই। কিন্তু তথ্য বিকৃত করে সিপিএম প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে যান তৃণমূল প্রার্থী। আর এই গোটা প্রক্রিয়ায় সরকারি আধিকারিকরা যুক্ত ছিলেন, যা নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবেই চিহ্নিত হচ্ছে রাজ্যে।
সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, যত কাণ্ড কী তৃণমূল আমলেই ঘটছে? রাজ্য সরকারের সাধারণ কর্মী বা শীর্ষ আধিকারিকদের একাংশের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে শাসক দল তৃণমূল নির্বাচনী ময়দানে নামছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। আর সেই অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট নিযুক্ত তথ্যানুন্ধান কমিটি। তবে কি সত্যিই প্রশাসনের একাংশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে? যদি বাস্তবে সেটাই হয়ে থাকে তাহলে সাধারণ মানুষ প্রশাসনের উপর আর কী ভরসা রাখতে পারবে? উলুবেড়িয়ার এই অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনার জেরে এমন প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে।