কলকাতা: বিগত কয়েক বছর ধরেই তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিরোধীরা। যথারীতি এ বিষয়ে সবচাইতে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সদ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ১৫২ কোটি টাকার টেন্ডার দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে চিঠিও দিয়েছেন শুভেন্দু। এই অভিযোগ নিয়ে যাতে আয়কর দফতর বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তদন্ত করে, সেই দাবিও তুলেছেন বিরোধী দলনেতা।
এর পাশাপাশি শুভেন্দুর অভিযোগ, পাবলিক সার্ভিস কমিশনে চিরকুট দিয়ে তৃণমূল আমলে অনেকের চাকরি হয়েছে। সেখান থেকে যারা বিডিও হয়েছেন তাঁরাই এবার পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের হয়ে দুর্নীতি করেছেন। উল্লেখ্য সিপিএম জমানাতেও চিরকুট দিয়ে অনেকের চাকরি হয়েছে বলে কয়েক মাস আগেই অভিযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
যে অভিযোগ নিয়ে যথেষ্ট আন্দোলিত হয় রাজ্য রাজনীতি। কিন্তু শুভেন্দু যখন লাগাতার এত অভিযোগ করছেন, তখন এটাও বলতে হবে যে তাঁর বিরুদ্ধেও সারদা-নারদা কাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। নারদা কাণ্ডে শুভেন্দু প্রকাশ্যে টাকা নিচ্ছেন এমন দৃশ্য দেখেছে গোটা বাংলা। সেই সঙ্গে তৃণমূলের অভিযোগ সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে দফায় দফায় বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়েছিলেন শুভেন্দু। যদিও সেই অস্বীকার করেছেন শুভেন্দু। কিন্তু তাতে বিতর্ক থেমে থাকছে না।
তাই প্রশ্ন, শুভেন্দু যেভাবে নিয়মিত নিত্যনতুন অভিযোগ করে চলেছেন তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে, সেই অধিকার কতটা রয়েছে তাঁর? যাকে নারদা ভিডিও’তে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে তাঁর মুখে এমন সব অভিযোগ কতটা সাজে সে প্রশ্ন তুলবেই। তাই সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত রাজনৈতিক পরিমণ্ডল বা প্রশাসন রাজ্যবাসী কবে পাবে, বর্তমানে সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে এটা কেউই অস্বীকার করতে পারবেন না যে তৃণমূল আমলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির গন্ধটা বড্ড বেশি উগ্রভাবে পাওয়া যাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে। এটা যে একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয় সেটা সকলেই জানেন। কিন্তু একশ্রেণির তৃণমূল নেতা বা প্রশাসনের কোনও প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আসা বন্ধ করা যাচ্ছে না।
কিছুতেই সেখানে যেন লাগাম পরানো যাচ্ছে না। তাই শুভেন্দু অধিকারী নতুন করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যে ১৫২ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন, তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। যদিও তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ দাবি করেছেন শুভেন্দু যে অভিযোগ করছেন তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন। উল্টে সারদা মামলায় শুভেন্দুর বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে কুণাল ফের দাবি করেছেন। সব মিলিয়ে দুর্নীতি ইস্যুতে সরগরম রাজ্য রাজনীতি।