বাংলায় অটোমোবাইল শিল্প গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, ট্র্য়াজিক হিরো হয়েই রয়ে গেলেন বুদ্ধদেব!

বাংলায় অটোমোবাইল শিল্প গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, ট্র্য়াজিক হিরো হয়েই রয়ে গেলেন বুদ্ধদেব!

কলকাতা:  শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি বেশ সঙ্কটজনক থাকলেও, তিনি চিকিৎসায় সাড়া দেন৷ মঙ্গলবার কথাও বলেছেন বর্ষীয়ান এই বাম নেতা৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পড়তেই দলমত নির্বিশেষে সকলেই তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে উতলা৷ আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে তাঁর সাদামাটা জীবন৷ কিন্তু, ইতিহাসের পাতায় তিনি আজও ‘ট্রাজিক হিরো’৷  

বুদ্ধদেববাবুর স্বপ্ন ছিল বংলাকে অটোমোবাইল শিল্প মানচিত্রে মাস্ট ভিজিট ডেস্টিনেশন হিসাবে গড়ে তোলা৷ কিন্তু, নিজের কার্যকালে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ বরং ইতিহাসের পাতায় তাঁর ঠাঁই হয়েছে ট্র্যাজিক হিরো হিসাবেই৷ রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মতে, বুদ্ধদেববাবু কখনই তাঁর পূর্বসূরী জ্যোতি বসুর জুতোয় পা গলাতে চাননি৷ বরং তিনি হাঁটতে চেয়েছিলেন বাংলার রূপকার বিধানচন্দ্র রায়ের পথে৷ তাঁর কাছে একটা বিষয় স্পষ্ট ছিল যে, শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান ছাড়া বাংলার ভবিষ্যৎ অন্ধকার৷ তাই মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার পরই বুদ্ধদেববাবু ঝাঁপিয়েছিলেন রাজ্যের শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে৷ এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যখন বিধানচন্দ্র রায়ের পথে চলার অঙ্গীকার নিয়েছেন, তখন কংগ্রেস থেকে উঠে আসা নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুর আন্দোলন গড়ে তুলেছেন৷ প্রবল বিরোধিতা করেছেন টাটা কারখানার৷    

বাংলার গাড়ি শিল্পে সাফল্যের দৌড় শুরু হয়েছিল বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে৷ স্বাধীন ভারতে শিল্পযাত্রার উড়ান শুরু হয়েছিল এই বঙ্গভূমি থেকেই৷ সেই সময় শিল্পক্ষেত্রের ডেস্টিনেশন ছিল উত্তরপাড়ার গাড়ি কারখানা৷ ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই স্থাপিত হয় হিন্দুস্তান মোটর্স৷ অ্যাম্বাসেডর কারখানা তৈরির জন্য বিকে বিড়লার সঙ্গে কথা বলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়৷ কারখানা গড়ার জন্য হিন্দুস্তান মোটর্সকে ৭৪৪ একর জমিও দিয়েছিলেন তিনি৷ তবে কালের স্রোতে সেই কারখানা তাঁর গৌরব হারায়৷ ২০১৪ সালে পাকাপাকি ভাবে তালা ঝোলে কারখানার গেটে৷ 

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সিঙ্গুরে যে গাড়ির কারখানা গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তা আক্ষরিক অর্থেই এখন মাটিতে মিশেছে৷ জলে গিয়েছে সিঙ্গুরকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবাংলাকে অটোহাব গড়ে তোলার স্বপ্ন৷ ২০০৬ সালে সিপিএমের জয় নিশ্চিত হওয়ার পরই ফোন করেছিলেন রতন টাটা৷ ওই দিনই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন ন্যানো কারখানা তৈরি করার কথা৷ টাটারা যখন সিঙ্গুরে কারখানার ভিত গড়া শুরু করেন, তখন জমি অধিগ্রহনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল৷ ২০০৮ সালের ৩ অক্টোবর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে আলোচনার পর সিঙ্গুর থেকে সরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন রতন টাটা৷ ক্ষমতায় আসার পর সিঙ্গুরে গিয়ে জমি ফিরিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ভেঙে ফেলা হয় টাটার কারখানার কাঠামো৷ অনিচ্ছুক জমি ফিরে পান ঠিকই৷ কিন্তু সেই জমি এখনও পুরোপুরি চাষযোগ্য হয়নি৷ চাষীরা বলছে, এ জমিতে চাষ করা হয় না৷ টাটারা চলে গিয়েছে সানন্দে৷ আর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রয়ে গিয়েছেন ট্রাজিক হিরো হয়ে৷ 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 + 7 =