কলকাতা: ফের একবার ফোঁস করে উঠেছিলেন, তারপরেই আবার ফিরে গেলেন আগের অবস্থায়। ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের সব বিপ্লবে ইতি। দলবিরোধী মন্তব্য করায় তাঁকে শো-কজ করেছিল তৃণমূল। আর সেই শো-কজের উত্তর দিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত দলের কাছে ক্ষমা চেয়ে শাস্তি এড়ালেন তৃণমূল বিধায়ক। গোটাটাই যেন চিত্রনাট্য মেনে সম্পন্ন হল।
বেশ কিছুদিন ধরেই তৃণমূলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছিলেন তিনি। তাই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মুর্শিদাবাদের ভরতপুর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে শো-কজ করে তাঁর দল। সংবাদমাধ্যমের সামনে নিয়মিত তিনি যে সমস্ত কথা বলছেন তা দলবিরোধী বলেই মনে করে তৃণমূল। কেন তিনি এভাবে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন তার কারণ জানতে চেয়েই চিঠি পাঠানো হয়েছিল হুমায়ুনের কাছে। বিষয়টি নিয়ে হুমায়ুন বলেছিলেন,” রাজ্য নেতৃত্ব যা জানতে চেয়েছেন যথাযথ সময়ে তার উত্তর আমি দেব৷” তবে এ কথা বললেও তিনি যে দলের চাপের কাছে মাথা নত করবেন না সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন।
মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি দলের রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে হুমায়ুনকে সেদিন বলতে শোনা গিয়েছিল,”আমি ৪৩ বছর ধরে রাজনীতি করি। ১৮ বছর বয়স থেকে রাজনীতি করছি। যতদিন আমার শরীর স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকব। তৃণমূল করার অধিকার যদি কেড়ে নেওয়া হয় তাহলে আগামী দিনে নতুন দল করব। ২০২৬ নির্বাচনের আগে। আর সেটা গোটা রাজ্যের দল হবে। আমি তৃণমূল ছাড়ছি না। কিন্তু দল যদি আমাকে বহিষ্কার করে তবে সিপিএম, কংগ্রেস বা আইএসএফে নয়, নতুন দল তৈরি করে বুঝিয়ে দেব যে আমার সঙ্গে মানুষ আছে।” এরপরই হুমায়ুনের নাম না করে বিধানসভার অন্দরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গিয়েছিল, “মুর্শিদাবাদ জেলার রেজিনগরে আমাদের দলের একজন আছেন যিনি মাঝেমধ্যেই হুঙ্কার দেন। গুন্ডামি করেন। আমাদের দলে থাকলেও তাঁর কাজকর্মকে সমর্থন করি না”। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায় যে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থা নিতে চলেছে তৃণমূল। এরপরই তাঁকে শো-কজ করা হয়।
রেজিনগর হুমায়ুনের খাসতালুক হলেও একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে ভরতপুর কেন্দ্র থেকে টিকিট দেওয়া হয়। সেখান থেকেও বড় ব্যবধানে জিতেও আসেন তিনি। তবে তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর সংঘাত শুরু হয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকে। তাঁর অনুগামীদের টিকিট দেওয়া হয়নি মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল নেত্রী শাওনি সিংহ রায়ের অঙ্গুলিহেলনে, এই অভিযোগ তুলে বার বার সরব হয়েছেন তিনি। এরপর তিনি দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভরতপুরের বেশ কিছু পঞ্চায়েতে নিজের অনুগামীদের নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেন। তাঁদের অনেকে জিতেও যান। এরপর হুমায়ুন তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে থাকেন নির্দলদের নিয়ে তিনি বোর্ড গঠন করবেন। এরপর ২১ জুলাই তৃণমূলের ‘শহিদ’ দিবস উপলক্ষে কলকাতায় এসে ফের দলকে অস্বস্তিতে ফেলেন হুমায়ুন।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন,”এর জন্য দায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং পশ্চিম বাংলার পুলিশ প্রশাসন। যে কোনও নির্বাচন আসবে যাবে, কিন্তু এত মানুষের হত্যা বা এত রক্ত, এটা কোনও মানুষই প্রত্যাশা করেন না। এত মানুষের জীবন এভাবে যেতে দেওয়া যায় না। এবার জঘন্যতম পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে। এই আচরণ যদি বুদ্ধবাবুর পুলিশ করত তাহলে কি ২০১১ সালে পরিবর্তন হতো? অতীত ভুললে চলবে না।” কিন্তু ওই পর্যন্তই। এর বেশি আর নিজের বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি তিনি। এই পরিস্থিতিতে শো-কজের জবাব দিতে গিয়ে হুমায়ুন বলেছেন,”দলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। তাছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা সুব্রত বক্সীর প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে৷” এভাবেই হুমায়ুনের বিপ্লব এ যাত্রায় শেষ হল। ফের কবে তিনি ‘বিপ্লব’ করবেন, আর তারপর ডিগবাজি খেয়ে পুরনো অবস্থানে ফিরে আসবেন, এখন তারই অপেক্ষা।