হাসনাবাদ: স্বপ্ন সকলের থাকে। সকলেই স্বপ্ন পূরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান। কিন্তু কারোর স্বপ্ন পূরণ হয়, কারোর হয় না। তবে আব্দুল হামিদ মণ্ডল স্বপ্ন অধরা ছেড়ে দেওয়ার মানুষ ছিলেন না। ছোট থেকেই যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন তার জন্য যা করার দরকার তিনি করেছেন। শেষে ফলও পেলেন। তবে তাঁর স্বপ্ন বাকি পাঁচজনের মতো ছিল না। গতানুগতিক বড় চাকরি, বাড়ি, গাড়ির আকাঙ্ক্ষা তিনি করেননি। দেখেছিলেন চাষের স্বপ্ন। তবে তা যে-সে চাষ নয়।
কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে ভারতের পরিচিতি আছে। যদিও চাষকে অতটাও গুরুত্ব দেওয়া হয় না যতটা দেওয়া উচিত। কিন্তু আব্দুল হামিদের ভাবনা, ধারণা ভিন্ন। তিনি দেখতে চেয়েছিলেন সৌদি আরবের থেকে আনা খেজুরের বীজ দিয়ে দেশের মাটিতে কি বৃক্ষরোপন সম্ভব? ছোট থেকে আরবের খেজুর বীজ নিয়ে এসে তার বাড়িতে রোপন করার ইচ্ছা ছিল তাঁর। এর জন্য স্কুলে যাবার সময় বাবা-মা তাঁকে যে টাকা দিতেন তা জমিয়ে রাখতেন আব্দুল। স্বপ্ন ছিল সেই জমানো টাকা দিয়েই তিনি সৌদি যাবেন, নিয়ে আসবেন সে দেশের মরিয়ম খেজুরের বীজ। তাই দিয়েই চাষ করবেন নিজের বাড়িতে। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
ভারতের মাটিতে এই খেজুর গাছ হওয়া কি সম্ভব? এই একটা প্রশ্নের তাড়নায় তিনি আজ নিজের সেই ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। সৌদি আরব থেকে সেই খেজুরের বীজ হাতে পেয়েছেন তিনি। চাষ করেছেন বাড়িতে। উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদ ব্লকের বেনাগ্রামের আব্দুল হামিদ মণ্ডল তাই এখন চর্চার কেন্দ্র বিন্দুতে। আব্দুল জানিয়েছেন, তিনি অটো গ্যারেজে কাজ করতেন। কিন্তু এখন গ্যারেজের কাজ কম করে, খেজুর গাছের দিকে বেশি মন দেন। তাঁর স্ত্রী জানিয়েছেন, সংসার চালানোর টাকা থেকে কিছুটা বাঁচিয়ে তিনি গাছের সরঞ্জাম যেমন তেল, সার প্রভৃতি কিনে আনেন। অন্তত তিন বছর আগে ৩০টির বেশি খেজুর গাছ লাগিয়েছিলেন তারা। এখন গাছে ফলন লেগেছে। তাতেই চূড়ান্ত খুশি আব্দুল এবং তার পরিবারের লোকজন। তাঁর বাড়িতেও এখন ভিড় বাড়ছে আরবীয়ান এই খেজুর গাছ দেখতে।
আরবের প্রাচীনতম প্রসিদ্ধ খেজুরগুলোর মধ্যে অন্যতম এই মরিয়ম খেজুর। সৌদির বিভিন্ন অঞ্চলে এই খেজুর পাওয়া যায়। প্রচলিত আছে, এই খেজুর সংরক্ষণে কোনও রূপ কেমিক্যালের ব্যবহার করা হয় না। কোল্ড স্টোরেজে সঠিক তাপমাত্রায় নিরাপদে সংরক্ষণ করা হয়। এমনিতেই খেজুর উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। আর আব্দুলের বাড়িতে বেড়ে ওঠা এই মরিয়ম খেজুরের খ্যাতি তো বিশ্ব জোড়া। এখন নিজের জেলায় বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন তিনি নিজেই। দূর দুরান্ত থেকে এই খেজুর দেখার জন্য ভিড় জমছে তাঁর বাড়ির সামনে।