নিজস্ব প্রতিনিধি: পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য জুড়ে শুরু হয়ে যায় হিংসা। ফলাফল প্রকাশের পরেও জেলায় জেলায় হিংসা অব্যাহত ছিল। কিন্তু পঞ্চায়েতে কারা বোর্ড গঠন করবে সেটা নিয়েও যে এত অশান্তি আর হিংসা ছড়াবে বিভিন্ন জেলায়, তা ভাবা যায়নি। এই গোটা পর্বে পঞ্চাশ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এমন রক্তক্ষয়ী পঞ্চায়েত নির্বাচন যে তৃণমূল সরকারের আমলে হবে, তা কি কেউ ভেবেছিলেন? কিন্তু বাস্তবে সেটাই হয়েছে। আর বোর্ড গঠনকে ঘিরে জেলায় জেলায় অশান্তি তুঙ্গে।
বিপক্ষের জয়ী সদস্যদের অপহরণের অভিযোগ উঠছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যাতে বিরোধীরা বোর্ড গঠন করতে না পারে সেই কারণেই অপহরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে শাসক দলের পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধেও সুর চড়াচ্ছেন বিরোধীরা। আর তেমনই একটি পরিস্থিতিতে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়লেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। হুগলির ফুরফুরায় বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। তার আগে ফুরফুরা জুড়ে ব্যাপক অশান্তি হয়। বোমাবাজির পাশাপাশি গুলি চলার অভিযোগ ওঠে। রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করে বিরোধীরা। আইএসএফের অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসন তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে অভিযোগ উঠেছে ফুরফুরায় নওশাদ এক পুলিশকর্মীকে তুই তোকারি করে কথা বলেছেন। যে ঘটনায় অবাক সবাই। কারণ বরাবরই নওশাদকে শান্ত ধীরস্থির মেজাজে কথা বলতে দেখা যায়। কাউকে অসম্মান করেন না তিনি। বলা যায় অন্য ধারায় রাজনীতি করে প্রশংসিত হচ্ছেন তিনি। তাই প্রশ্ন, এতটা উত্তেজিত কেন হয়ে উঠলেন তিনি?
আইএসএফের অভিযোগ, ভাঙড়ে জেতার পর থেকেই নওশাদ শাসকদলের অন্যতম টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। কারণ নওশাদের দল ইতিমধ্যেই সংখ্যালঘু ভোটে ভাগ বসিয়েছে। রাস্তায় নেমে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে নওশাদকে চল্লিশ দিনের বেশি জেলবন্দি থাকতে হয়েছিল। নওশাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছেন এক মহিলা, যিনি সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। আইএসএফের দাবি, এটা একেবারেই ভিত্তিহীন অভিযোগ। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই এই অভিযোগ নওশাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে বলে আইএসএফের দাবি। ভাঙড়ে অশান্তির পর দীর্ঘদিন নওশাদ নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে ঢুকতে পারেননি। বার বার আবেদন করা সত্ত্বেও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পাননি তিনি। কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে নিরাপত্তা পেতে হয়েছে তাঁকে। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পেয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে নওশাদের স্বল্প রাজনৈতিক কেরিয়ার যে অস্থিরতায় ভরা তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে কি সেই কারণেই এবার তাঁকে উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে দেখা গেল পুলিশের সঙ্গে? ঘটনাপ্রবাহ আজ তাঁকে এই জায়গায় এনে দিয়েছে? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে।
তবে পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন ঘিরে যেভাবে জেলায় জেলায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে তাতে প্রশ্ন হচ্ছে এ কোন বাংলা? বাংলা সারা ভারতকে পথ দেখায়, একথা বারবার বলেন বঙ্গের রাজনীতিকরা। এটাই কি তার নমুনা? সিপিএম আমলে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে যে ব্যাপক হিংসা দেখা দিয়েছিল, তার বদল ঘটবে তৃণমূল আমলে, এটাই প্রত্যাশিত ছিল। সেখানে পঞ্চায়েত নির্বাচন ও ফলাফল প্রকাশকে ঘিরে হিংসার পাশাপাশি এবার বোর্ড গঠন নিয়েও অশান্তি হচ্ছে, যা কিনা সিপিএম আমলে দেখা যায়নি। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার সময় বলেছিল, বদলা নয়, বদল চাই। কিন্তু কোথায় কী! সবমিলিয়ে এখনও যেভাবে বিভিন্ন জেলায় হিংসার আবহ রয়েছে তাতে উদ্বেগ বাড়ছে সব মহলে।