নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিশানায় তৃণমূল। তিনি যে এভাবে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করবেন, সেটা ভাবতেও পারেনি বাংলার শাসক দল। যে বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। শনিবার দিল্লি থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলায় পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে হয়ে যাওয়া বেলাগাম সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূলকে নজিরবিহীন আক্রমণ করেছেন মোদী। তিনি বলেন, “এই ভোটে তৃণমূল কীভাবে রক্তের খেলা খেলেছে, তা গোটা দেশ দেখেছে। হুমকির ভয়ে কেউ কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি। শুধু বিজেপি কার্যকর্তাদের ভয় দেখানোই নয়, ভোটারদেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিজেপি কর্মীদের আত্মীয়দেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে। এরপর ভোটের দিন দেদার ছাপ্পা হয়েছে। তখন তোলাবাজদের ফৌজ ছাপ্পাবাজের ফৌজ হয়ে গিয়েছিল। বাংলার পঞ্চায়েত ভোটে গুন্ডাদের বরাত দেওয়া হয়েছিল। গুন্ডাদের ভাড়া করে কীভাবে কোন বুথকে তারা দখল করবে, তা ঠিক করে দেওয়া হয়। এরপর ভোটের দিন মেশিন নিয়ে পালানো হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, গণনার দিন বিজেপি কার্যকর্তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁরা যাতে গণনাকেন্দ্রের কাছে থাকতে না পারেন সেটা করা হয়েছে। এভাবেই ভোটের দিন ব্যালট লুট করেছে। বিজেপি কর্মীদের কাউন্টিং সেন্টারে বসতে দেয়নি। সেখান থেকে টেনে বের করে দেওয়া হয়েছে। এত অত্যাচার, জুলুমবাজি, জবরদস্তির পরেও বাংলার মানুষ বিজেপিকে আশীর্বাদ করেছেন৷”
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে তাঁকে বিঁধে মোদী আরও বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল এই পদ্ধতিতেই রাজনীতি করে। এখানে আমাদের আদিবাসী ভাইবোনকে কতটা অত্যাচারিত হতে হয় সেটা আমরা জানি। এত চাপের মধ্যেও বিজেপির যে সমস্ত প্রার্থী জয়ী হয়েছেন তাঁদের শুভেচ্ছা জানাই। তাঁরা গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন। যারা কথায় কথায় ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, আপনারা তাঁদের মুখোশ খুলে দিয়েছেন। তৃণমূলের লোকেদের টিভির পর্দায় ব্যালট বাক্স নিয়ে পালাতে দেখা গিয়েছে। এভাবেই পঞ্চায়েত ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে৷”
ঘটনা হল প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় তৃণমূলকে আক্রমণ করেছেন সেই একই মত পোষণ করেন রাজ্যের সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব। পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে মোদী যে সমস্ত অভিযোগ তুলে ধরেছেন তা নিয়মিত শোনা যায় রাজ্যের তৃণমূল বিরোধীদের মুখে। সেই অর্থে প্রধানমন্ত্রী নতুন কিছু বলেননি। কিন্তু মোদীর এই বক্তব্যের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। কারণ বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তৃণমূলের সঙ্গে একই মঞ্চে রয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএম। সেই জোটে তৃণমূলের অবস্থান যথেষ্ট শক্তপোক্ত দেখাচ্ছে। বলা যায় এই জোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত ‘মধ্যমণি’ হিসেবে রয়েছেন। সেটাকে ভেঙে দিতে চাইছেন মোদী, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। কারণ রাজনৈতিক মহল মনে করছে যে সমস্ত অভিযোগ মোদী তুলেছেন তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে বিরোধী জোটে তৃণমূল সম্পর্কে কংগ্রেস, সিপিএমের পাশাপাশি অন্যান্য দলের খারাপ ধারণা যাতে হয় সেই লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রী এমন নজিরবিহীন আক্রমণ করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা মোদীর এই সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিতে পারছেন না রাজ্যের কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতৃত্ব। তাই বিরোধী জোটের মধ্যে যাতে অস্থিরতা তৈরি হয়, সেই লক্ষ্যেই কী মোদীর এই চড়া সুরে আক্রমণ? এই চর্চা যথারীতি শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
‘ইন্ডিয়া’ জোটে তৃণমূল কেন থাকবে সেই প্রশ্ন তুলছেন রাজ্যের কংগ্রেস এবং সিপিএমের নীচুতলার কর্মী-সমর্থকরা। তাঁদের অভিযোগ তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে সেটিং আছে, তাই বিজেপি বিরোধী জোটে তৃণমূলকে রাখা উচিত হবে না। সেই জায়গা থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঘটে যাওয়া বেলাগাম সন্ত্রাসের ঘটনা তুলে ধরে যেভাবে তৃণমূলকে মোদী তীব্র আক্রমণ করেছেন, তার যথেষ্ট রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে বলে মনে করা হচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে বিজেপিকে যাতে পড়তে না হয় সেই লক্ষ্যেই যে মোদীর এই আক্রমণ তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তাই মোদীর এই আক্রমণ কংগ্রেস এবং সিপিএমকে যে যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলে দিল সেটা পরিষ্কার। লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে এই ইস্যুতে তৃণমূলকে যে বিজেপি আরও চেপে ধরবে, সেটাও স্পষ্ট। তার সূচনা করে দিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।