adhir salim
নিজস্ব প্রতিনিধি: সামনেই ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচন। এই নির্বাচনে মূল লড়াই তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে হতে চলেছে। গত কয়েক বছরের রাজনৈতিক সমীকরণ সে কথাই বলছে। এই উপনির্বাচনের প্রচারে এবার অধীর চৌধুরী ও মহম্মদ সেলিম এক মঞ্চে থাকতে চলেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটাই রাজ্য রাজনীতিতে অন্যতম চর্চার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। এর কারণ ‘পুকুর-নদী’ বিতর্ক। আর সেই ‘পুকুর-নদী’ বিতর্ককে দূরে সরিয়ে রেখে আসন্ন ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে সিপিএম প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে যাচ্ছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে যৌথ সভা করবেন তিনি। ১ সেপ্টেম্বর ধূপগুড়িতে যৌথ সভায় সেলিম ও অধীরকে দেখা যাবে।
বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তৃণমূলের সঙ্গে একই মঞ্চে রয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএম। বিষয়টি নিয়ে বাম-কংগ্রেসের নীচুতলার কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে দলের রাজ্য নেতৃত্বকে। এই পরিস্থিতিতে কিছুদিন আগে একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে অধীর ‘ইন্ডিয়া’ জোট অর্থাৎ সর্বভারতীয় স্তরকে নদী এবং রাজ্যস্তরের নির্বাচন বা রাজনীতিকে পুকুর বলে তুলনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন,”পুকুর এবং নদীর মধ্যে ফারাক আছে। আমার কাছে বাংলা হল পুকুর, আর ভারত হল নদী। আমি যেটা বলতে চাই সেটাই বলি, পিছন থেকে কথা বলি না।” আর লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে অধীর বলেছিলেন, এখন পুকুর বাদ দিয়ে নদীর কথাই ভাবতে হবে। তবে কী রাজ্যে তৃণমূলের প্রতি অধীর নরম অবস্থান নিতে শুরু করলেন? এ প্রশ্ন উঠে যায় তখন থেকেই। কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা কৌস্তভ বাগচী এই ইস্যুতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। অধীরের নাম না করে তাঁকে নিশানা করেছিলেন কৌস্তভ। এই আবহের মধ্যে পুকুর ও নদী বিতর্ককে দূরে রেখে ১ সেপ্টেম্বর ধূপগুড়িতে সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায়ের সমর্থনে প্রচার করতে চলেছেন অধীর। ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে সিপিএমের প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তথা ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী ঈশ্বরচন্দ্র রায়।
তৃণমূলের প্রার্থী অধ্যাপক নির্মল চন্দ্র রায় এবং বিজেপির প্রার্থী পুলওয়ামায় শহিদ জওয়ানের স্ত্রী তাপস রায়। ধূপগুড়ির বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপদ রায়ের অকাল মৃত্যুতে রাজবংশী অধ্যুষিত এই বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হচ্ছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সমর্থনে সিপিএম প্রার্থী ভোটে লড়ে ৬ শতাংশেরও কম ভোট পেয়েছিলেন। তৃণমূলকে চার হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী বিষ্ণুপদ রায়। তাই এবারেও লড়াইটা মূলত তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যেই হতে চলেছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। সেই জায়গা থেকে কংগ্রেসের সমর্থনে সিপিএম প্রার্থী মোটিমুটি ভোট পেয়ে ধূপগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের মাটিতে প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে পারে কিনা সেটাই দেখার। তাই সর্বভারতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তৃণমূলের পাশে কংগ্রেস এবং সিপিএম থাকলেও ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের প্রচারে নেমে অধীর-সেলিম জুটি যে তৃণমূলকে ছেড়ে কথা বলবেন না তা স্পষ্ট।
সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনে সিপিএমের সমর্থনে কংগ্রেসের প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস জয়ী হয়েছিলেন। যদিও এক মাসের মধ্যেই তিনি তৃণমূলে যোগদান করেন। তাই ধূপগুড়ির উপনির্বাচনে সাগরদিঘি মডেলের মতো বাম-কংগ্রেস জোট বাজিমাত করতে পারে কিনা এখন সেটাই দেখার। বঙ্গ রাজনীতিতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র বিরোধী বলে পরিচিত অধীর চৌধুরী। সব সময় আগ্রাসী মেজাজে তিনি মমতা তথা তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হন। কিন্তু ‘পুকুর-নদী’ ইস্যু সামনে আসার পরই রাজ্য রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়। তবে কী তৃণমূল সম্পর্কে এবার থেকে নরম অবস্থান নিতে দেখা যাবে অধীরকে? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠতে থাকে। এই আবহের মধ্যে অধীর-সেলিমের যৌথ প্রচার মঞ্চ অনেক প্রশ্নেরই জবাব দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।