কলকাতা: তাঁর হাজিরা নিয়ে দীর্ঘ জল্পনা চলছিলই। অবশেষে আজ নির্ধারিত সময়েই ইডি দফতরে হাজিরা দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে একাধিকবার সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এই প্রথম ইডির জেরার মুখোমুখি তিনি। কয়েক সপ্তাহ আগেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোম্পানি লিপস অ্যান্ড বাউন্সে তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। সেখান থেকে একাধিক নথি বাজেয়াপ্ত করেছেন তদন্তকারীরা। তার পরেই বুধবারের তলব নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়োগ দুর্নীতি থেকে কয়লাকাণ্ড, এর আগেও কেন্দ্রীয় এজেন্সির মুখোমুখি হয়েছেন অভিষেক। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের লেখা এক চিঠির সূত্রে গত ২০ মে অভিষেককে টানা প্রায় ১০ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। এর ঠিক কদিন পরেই ১২ জুন, কয়লাকাণ্ডে অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে পাঠায় ইডি। তিনি হাজিরাও দেন। ওই দিনেই ১৩ জুন হাজিরার কথা জানিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠায় ইডি। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে হাজিরা দেওয়ার জন্য তলব করা হয় তাঁকে। কিন্তু, সেই হাজিরা এড়িয়ে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়ানোর সঙ্গে বেআইনি কয়লাপাচার-কাণ্ড নিয়েও উঠেছে অভিযোগ। ১ হাজার ৩৫২ কোটি টাকার দুর্নীতিও দেখতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। মামলায় অভিষেকের পাশাপাশি জড়িয়েছে তার স্ত্রী, শ্যালিকার নাম। একুশের বিধানসভার আগেও অভিষেক ইস্যুতে সক্রিয় ছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি। ২০২১-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে হানা দিয়েছিল সিবিআই। কয়লাপাচার কাণ্ডে তাঁর স্ত্রী রুজিরাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেন তাঁরা। এরপর তাকে দিল্লীতে তলব করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। কিন্তু, সেই সময় দিল্লি যাননি অভিষেক-জায়া। একই বছর কয়লাকাণ্ডে অভিষেককে তলব করে ইডি।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কুন্তল ঘোষকে গ্রেফতার করার পরেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উঠে এসেছে। কুন্তল ঘোষ অভিযোগ করেছিলেন ইডি তাঁকে চাপ দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলানোর চেষ্টা করছে। তারপরেই আদালতে মামলা করেন কুন্তল ঘোষ। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই দফায় দফায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করে জেরা করেছে সিবিআই। তবে ইডি এই প্রথম। একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও নিজের অবস্থানে বরাবরই অনড় থেকেছেন অভিষেক। গত ২৮ অগাস্ট, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ওপেন চ্যালেঞ্জ জানান ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।
তবে আজ অভিষেককে কেবল জিজ্ঞাসাবাদ করতেই ডেকেছে ইডি। কারণ আদালতের রক্ষা কবচ রয়েছে তাঁর ওপর। এর আগে ইডি তলবের পরেই আদালতে রক্ষা কবচের আবদেন জানিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে আদালত ইডিকে কড়া নির্দেশ দিয়ে জানিয়েছিল যে, কোনও রকম কড়া পদক্ষেপ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে করা যাবে না। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে তদন্তের রিপোর্ট পেশের ডেডলাইন রয়েছে। তার আগেই তড়িঘড়ি তৃণমূল সেনাপতিকে সিজিওয় ডাক এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের।