bhuvan
কলকাতা: এক গানেই ভুবন বিখ্যাত হয়েছিলেন ভুবন বাদ্যকর৷ তাঁর ‘কাঁচা বাদাম’ গানের নেশায় বুঁদ হয়েছিল আট থেকে আশি৷ ‘কাঁচা বাদামে’র সুরে মেতেছিল আসমুদ্র হিমাচল৷ এই গানেই একের পর এক রিল বানিয়েছিলেন সেলিব্রিটিরা৷ আর বাদাম কাকুও হয়ে উঠেছিলেন স্টার৷ খ্যাতির সঙ্গে এসেছিল অর্থও৷ রাতারাতি সেলিব্রিটি হওয়া ভুবন ভাঙা কুঠির ছেড়ে বানিয়েছিলেন রাজপ্রাসাদ৷ কিনেছিলেন গাড়ি৷ গগনচুম্বি জনপ্রিয়তার তাড়নায় নাওয়া-খাওয়া ভুলেছিলেন গ্রামের এই সাদামাটা মানুষটা৷ মেলা থেকে খেলা, কিংবা ভোটের প্রচার, সর্বত্রই দেখা মিলত বাদাম কাকুর৷ কিন্তু ভাগ্য বদলাতে যে বেশি সময় লাগে না৷ যে ভুবন ‘কাঁচা বাদাম’ গানের ‘ভুবনায়ন’ ঘটিয়েছিলেন, তিনিই আজ একা, নিঃসঙ্গ৷ ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস দেখে ভবুনের মুখে তাই তাচ্ছিল্যের হাসি৷
দুবরাজপুরের কুড়ালজুড়ি গ্রামের বাড়িতেই এখন দিন কাটছে ভুবনের৷ খানিকটা বাঁকা হাসি হেসেই ভুবন বললেন, ‘লোকজন শুধু ঠকিয়েই গেল! শুধু ঠকিনি কাঁচা বাদাম বিক্রি করে। ভাবছি, ওই পেশাতেই আবার ফিরে যাব। যেখানে অন্তত দুষ্টু মানুষের ছলচাতুরি নেই।’
বাদাম বিক্রিকে আকর্ষণীয় করে তুলতেই দু’কলি গান বেঁধেছিলেন ভুবন বাদ্যকর। বাইক নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরতেন তিনি। পথে ঘাটে বাদাম বিক্রি করতেন। সেই সঙ্গে গাইতেন মন ভালো করা ‘কাঁচা বাদাম’ গানখানি৷ তবে তিনি নিজেও বুঝতে পারেননি এই গান গাইতে গাইতে কবে গাইয়ে হয়ে উঠেছেন৷ যখন জানলেন, তখন তিনি গোটা ভুবনের৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় বয়ে চলেছে ‘কাঁচা বাদাম’ ঝড়। সেই গানের জিয়ন কাঠিতেই বদলে যায় তাঁর জীবন৷ রিয়ালিটি শো থেকে গানের শো, বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাক আসতে শুরু করে৷ এমনকী যাত্রাপালার দলেও নাম লিখিয়ে ফেলেন বাদাম কাকু৷ সব জায়গায় তাঁকে নিয়ে মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস৷ দুর্গাপুজোর উদ্বোধন হোক কিংবা মেলা, ফিতে কাটার সময় পাচ্ছিলেন না ভুবন। যেখানে গিয়েছেন, সেখানেই মিলেছে মানুষের আপ্রাণ ভালোবাসা৷ হাসি মুখে মিটিয়েছেন ভক্তদের সেলফি তোলার বায়না৷ দু’হাতে টাকাও কামিয়েছেন৷ দু’চাকা ছেড়ে সওয়ারি হন চারচাকায়। হাতে তখন দামি আই ফোন। বদলে যায় বেশভুষা৷ তৈরি করেন প্রাসাদোপম বাড়ি৷ নাম রাখেন ইউকিপিডিয়া। অন্য এক ‘ভুবন’ গড়ে তোলেন ভুবন৷
তবে ভুবন হয়তো বুঝতেও পারেনি, সবটাই ছিল সাময়িক৷ বিগত দু’বছরের মধ্যে বদলে গিয়েছে অনেক কিছু৷ গানের কপি রাইট সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমায় তিনি ক্লান্ত৷ যাত্রাপালা করেও মিলছে না উপযুক্ত পারিশ্রমিক৷ সামনেই পুজো৷ বীরভূমের এক পুজো কমিটি ছাড়া সে ভাবে শো-ই পাননি৷ সব মিলিয়ে যেন বিধ্বস্ত ভুবন৷ তাঁর গলায় শুধুই আক্ষেপের সুর৷
একরাশ অভিমান নিয়েই ভুবনকে বলতে শোনা যায়, ‘ভাবছি, বাদাম বিক্রির পেশাতেই ফিরে যাবো। এখন কেউ ডাকলেও যাই না। মামলা নিয়ে জর্জরিত। যাত্রা করলেও টাকা দেয় না। তাই সেসব আর করব না। নিজে দু’চারটা গান করব। সেগুলো ইন্টারনেটে রিলিজ করব। বাদাম বিক্রি করেই আমি যা কিছু পেয়েছি। তাই আগামীতেও বাদামই বিক্রি করব। গানের কপিরাইট নিয়ে কেস করেছি। আমার সঙ্গে গদ্দারি করা হয়েছে।’’ গ্রামের লোক বলছে, সহজ সরল ভুবনকে সকলে ঠিকিয়ে চলে গেল৷ আর ভুবন? সে হয়তো কখনও ভাবতেও পারেনি চোখ ধাঁধানোর আলোর পিছনে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে একরাশ অন্ধকার৷