sajal ghosh
নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্য রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে দাপুটে ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিতি রয়েছে কলকাতা পুরসভার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষের। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন কারণে বারবার খবরের শিরোনামে এসেছেন তিনি। এবার কলকাতা পুরসভার অধিবেশন কক্ষে অশান্তির ঘটনায় ফের সামনে চলে এল সজলের নাম। অভিযোগ অধিবেশন কক্ষের মধ্যে সজলকে নিগ্রহ করেছেন তৃণমূলের একাধিক কাউন্সিলর। যে ঘটনার জেরে সরগরম কলকাতা পুরসভা। আর বারবার এমন কিছু ঘটনার জেরে সজল রাজ্য রাজনীতিতে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
শনিবার পুর অধিবেশনে সজল বলেন,”টেন্ডার দুর্নীতি নিয়ে আমি বিগত অধিবেশনে প্রস্তাব জমা দিয়েছিলাম। সেই প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়নি। আসলে পুরসভা যারা চালাচ্ছেন তাঁরা তো দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন”। এরপরই হই হট্টগোল শুরু করে দেন তৃণমূল কাউন্সিলররা। তখন তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশের উদ্দেশে সজল ‘চোর চোর’ বলতে থাকেন। তাতে রে রে করে তেড়ে আসেন একাধিক তৃণমূল কাউন্সিলর। অভিযোগ ধাক্কা দেওয়া হয় সজল ঘোষকে। অশ্রাব্য গালিগালাজও করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশের বিরুদ্ধে। তখন পাল্টা রুখে দাঁড়ান সজল। একটা সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরিস্থিতি সমাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যান মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ওদের কাছে এই আচরণ অপ্রত্যাশিত নয়। যেভাবে আমাদের একজন জনপ্রতিনিধিকে ঘাড় ধাক্কা দেওয়া হয়েছে, নিন্দার ভাষা নেই। আগামী দিনে বাংলার মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়াবে।’
কলকাতা পুরসভা নির্বাচনের আগে সজলের বাড়ির দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাঁকে একটি মামলায় গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। যেভাবে সজলের বাড়ির দরজা লাথি মেরে ভেঙেছিল পুলিশ, তাতে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। এরপর পুরসভা নির্বাচনে সজল ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে জয়লাভ করেন। অনেকেই মনে করেন যেভাবে সজলের বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছিল তা ভালভাবে নেননি এলাকার মানুষ। কিছুদিন আগে কলকাতা পুরসভায় উত্তর কলকাতার বিজেপি নেতা তমোঘ্ন ঘোষের সাংবাদিক সম্মেলন ঘিরে ব্যাপক অশান্তি হয়। সেখানেও সজলকে প্রতিবাদী রূপে দেখা যায়। এছাড়া বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সজলকে নিয়মিত বিজেপির তরফে বক্তব্য রাখতে দেখা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে সজল দলের মধ্যে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছেন বলে রাজনৈতিক মহলে একাংশ মনে করছে।
ঘটনা হল সুদীর্ঘ বাম আমলে সজল ছাত্রনেতা হিসেবে যথেষ্ট সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। সেই সময় দেবু (সজলের ডাক নাম) নিয়মিত খবরের শিরোনামে থাকতেন। আর সেই সাংগঠনিক শক্তি অনেকটাই সজল ধরে রাখতে পেরেছেন বলেই তিনি কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে জয় ছিনিয়ে আনতে পেরেছেন। এই পরিস্থিতিতে সজলকে বড় দায়িত্ব দিয়ে বিজেপি কলকাতা জুড়ে ব্যবহার করতেই পারে। কারণ উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা জুড়ে বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি অত্যন্ত দুর্বল। সেই জায়গায় রাজ্য রাজনীতিতে অত্যন্ত চেনা মুখ দাপুটে নেতা হিসেবে পরিচিত সজলকে ব্যবহার করে বিজেপি লাভবান হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করে। এই আবহের মধ্যে পুর অধিবেশনে অশান্তির ঘটনার জেরে ফের খবরের শিরোনামে এলেন সজল। যে ঘটনা তাঁকে যে ‘রাজনৈতিক মাইলেজ’ দিতে পারে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।