accused
কলকাতা: এতদিন সিবিআই শব্দটা শুনলেই সবার কাঁপুনি ধরে যেত। এখন সেই সিবিআই রোজই ব্যাপক অস্বস্তির মধ্যে পড়ছে কলকাতা হাইকোর্টে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে নিয়মিত তাদের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হচ্ছে। পর পর তিনদিন যেভাবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআইয়ের উদ্দেশে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তা নজিরবিহীন বলেই মনে করে ওয়াকিবহাল মহল। বিচারপতির ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন, সিবিআই কী অভিযুক্তদের আড়াল করতে চাইছে? সেই সঙ্গে খোদ সিবিআই ডিরেক্টর প্রবীণ সুদকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। নিয়োগ মামলায় সিবিআইয়ের তদন্ত সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে সরাসরি তাঁর কাছ থেকে তথ্য চাইবেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
আর আদালতের এই কড়া পর্যবেক্ষণেই বহু প্রশ্ন উঠে আসছে। বিভিন্ন দুর্নীতির ঘটনায় কারা কারা যুক্ত তা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। যেমন আলিপুরদুয়ারে সমবায় দুর্নীতিতে সিআইডির তদন্ত পদ্ধতি নিয়ে বিচারপতি প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, “গরিবের টাকা মেরে দেওয়া হল। আপনারা তদন্ত নিয়ে ছেলেখেলা করছেন? কারা টাকা নিয়েছে সেটা সিআইডি এতদিনেও জানতে পারল না? কিন্তু আমি জানি৷” আবার এই মামলাতেই সিআইডির বদলে সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে তাদের তদন্ত পদ্ধতি ও মানসিকতা নিয়েও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন।
কিছুদিন আগের কথা, আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারকের নির্দেশে নিয়োগ মামলায় চারজন অভিযুক্তকে সিবিআই গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে। সেদিন নিম্ন আদালতে এজলাসের মধ্যেই মুর্শিদাবাদের ওই চার শিক্ষককে গ্রেফতার করে সিবিআই। বর্তমানে তাঁরা জামিনে মুক্ত আছেন। ঘটনা হল ওই চার শিক্ষককে সিবিআই গ্রেফতার করেছে নিম্ন আদালতের নির্দেশে। ওই চারজনের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁদের সিবিআই আগেই গ্রেফতার করেনি, সেই প্রশ্ন এবার তুলেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কেন মানিক ভট্টাচার্যকে জেরা করা নিয়ে সিবিআইয়ের এত অনীহা, সেই প্রশ্নও তুলেছেন বিচারপতি।
তাই আমজনতা এই সমস্ত ঘটনা দেখে স্পষ্টতই হতাশ হয়ে পড়েছে। রাজ্যের এক অত্যন্ত প্রভাবশালী রাজনীতিককে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন বারবার তুলেছে আমজনতা। সেই নিয়েও ‘সেটিং তত্ত্ব’ উঠে আসছে। ঠারেঠোরে আদালতও এই বিষয়ে একাধিকবার ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছে। তাই বিচারপতি সিবিআই-এর একাংশের সঙ্গে অভিযুক্তদের আঁতাত বা ‘সেটিং’ থাকার সম্ভাবনা নিয়ে যে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন তার কী কিছুটা হলেও সত্যতা আছে? সেই কারণেই কি রাঘববোয়ালরা এখনও জেলের বাইরে রয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন সবাই। সেই সূত্রে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।