dilip ghosh
নিজস্ব প্রতিনিধি: মধ্য কলকাতার ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনের পার্টি অফিস থেকেই বিজেপির আজ এতটা বিস্তার হয়েছে। এই অফিসে একটা সময় এসেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত অটলবিহারী বাজপেয়ী। তবে স্নানাভাবের কারণে বিজেপির নতুন পার্টি অফিস হয়েছে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে। এবার পুরনো অফিস ভেঙে দলের কল সেন্টার হবে বলে ঠিক করেছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। তাতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুমোদন রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। পুরনো রাজ্য অফিসে দিলীপের ঘর যেখানে ছিল সেখানেই কল সেন্টার হবে। ইতিমধ্যেই ওই ঘরের টিভির কেবল সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। খুলে নেওয়া হয়েছে এসি মেশিন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই অফিসে যাওয়া বন্ধ করতে চান না প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিষয়টি নিয়ে দিলীপ জানিয়েছেন দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে তিনি ওই পার্টি অফিসে গিয়ে দলের সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে দেখা করবেন। সেখানে তাঁর ঘর থাকল কি থাকল না, সেটা বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। যদিও সেই ঘর যেভাবে ভেঙে ফেলা হচ্ছে তা নিয়ে দিলীপ অনুগামীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বলতে কোনও দ্বিধা নেই রাজ্য বিজেপিতে সর্বকালের সেরা সভাপতি হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ। দিলীপ যখন রাজ্য সভাপতি ছিলেন তখন তাঁর হাত ধরেই দল বিধানসভা নির্বাচনে ৭৭টি আসনে জয়ী হয়েছে। দিলীপের নেতৃত্বে বিজেপি লোকসভায় পেয়েছে ১৮টি আসন। এককথায় বলা যায় রাজ্য বিজেপি সাবালক হয়েছে দিলীপের নেতৃত্বে। সেই জায়গা থেকে দিলীপ রাজ্য সভাপতির পদ খুইয়েছেন। এরপর দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদ থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন দিলীপ শুধুই একজন সাংসদ। তাই প্রশ্ন উঠছে, যেভাবে বিজেপির পুরনো রাজ্য অফিসে থাকা দিলীপের ঘর ভেঙে ফেলা হচ্ছে তার কি খুবই প্রয়োজন ছিল? যা হচ্ছে তা কী প্রাপ্য ছিল দিলীপের? এমনিতেই রাজ্য বিজেপি ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। একের পর এক উপনির্বাচনে বিজেপির পরাজয় হচ্ছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে দল প্রত্যাশার ধারে কাছে পৌঁছতে পারেনি। এই ব্যর্থতার দায় কী বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নয়? তাঁরাই তো এখন রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। এই ব্যর্থতার দায় তাঁদের নেওয়া উচিত বলে রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করেন। তাই বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে দিলীপকে যথেষ্ট অভিমানী দেখাচ্ছে। সেভাবে সংবাদমাধ্যমের সামনে দিলীপকে মুখ খুলতে দেখা যায় না। আর মুখ খুললেও তাঁকে যথেষ্ট সাবধানী বক্তব্য রাখতে দেখা যায়। দিলীপ অনুগামীরা মনে করেন একুশের বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরেও দল যদি দিলীপকে রাজ্য সভাপতি পদে রেখে দিত, তাহলে আজ বিজেপির এই অবস্থা হতো না। যেভাবে বিজেপির ভোট কমতে শুরু করেছে তাতে রীতিমতো অশনি সংকেত দেখছেন দলের আদি নেতাকর্মীরা। ঘটনা হল গত বিধানসভা নির্বাচনে দিলীপের নেতৃত্বে বিজেপি রাজ্যে ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। আর ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি রাজ্যে ভোট পেয়েছিল চল্লিশ শতাংশের বেশি। এত বেশি শতাংশ ভোট পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে বিজেপি পেয়েছে দিলীপ রাজ্য সভাপতি থাকার সময়েই। যা কিনা অলটাইম রেকর্ড। বাংলায় এই সাফল্য বিজেপির সাড়ে চার দশকের ইতিহাসে নেই। সেই জায়গা থেকে দিলীপকে যেভাবে ছেঁটে ফেলছেন রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, তাতে ক্ষুব্ধ দলের পুরনো দিনের নেতাকর্মীরা। সকলের একটাই কথা, এটা দিলীপের প্রাপ্য ছিল না। ভাল পারফরম্যান্স করার পরেও দিলীপকে এভাবে গুরুত্বহীন কেন করে দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে যথেষ্ট চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। তাই দিলীপ ইস্যু আগামী দিনে কোন দিকে মোড় নেয় তা নিয়ে যথেষ্ট কৌতূহল থাকবে রাজনীতি সচেতন মানুষজনের।