নিজস্ব প্রতিনিধি: বেছে বেছে যেদিন দলের কর্মসূচি থাকে সেদিনই ইডি তলব করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে, এই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন শাসকদলের সর্বস্তরের নেতৃত্ব। এরপরই গোটা বিষয়টিতে যোগ হল নয়া টুইস্ট! জানা গেল কর্মী-সমর্থকদের দিল্লি নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ট্রেনের আবেদন করা হয়েছিল তৃণমূলের তরফে, তা শেষ পর্যন্ত দিতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নতুন করে সুর চড়াতে শুরু করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ উঠছে। আর যেভাবে নতুন করে বিষয়টি নিয়ে আসরে নেমেছে তৃণমূল, তাতে তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অনেক বেশি মাইলেজ পেয়ে গেল বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা। ঘটনা হল পূর্ব রেলের তরফে শুক্রবার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যথাসম্ভব কোচ (রেক) পাওয়া যাচ্ছে না বলেই বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা গেল না। উল্লেখ্য পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রের কাছ থেকে বকেয়া টাকা পাচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলে ধরে ২ ও ৩ অক্টোবর দিল্লিতে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিতে চলেছে তৃণমূল। যে প্রতিবাদ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে তৃণমূল কর্মীরা কলকাতায় পৌঁছে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার থেকেই আসতে শুরু করেছেন। কয়েক হাজার কর্মীকে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ ট্রেনের আবেদন করেছিল তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার রেল জানিয়ে দিল বিশেষ ট্রেন তারা তৃণমূলকে দিতে পারছে না।
এ বিষয়ে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানিয়েছেন, “আমাদের কাছে তৃণমূলের তরফ থেকে কোনও আবেদন আসেনি। আইআরসিটিসি গ্রুপ জেনারেল ম্যানেজারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল তৃণমূল। তারা আমাদের কাছে ট্রেন চায়। রেক না থাকায় দিতে পারিনি”। যদিও তৃণমূলের দাবি রেল ইচ্ছে করলেই অতিরিক্ত রেক জোড়া লাগিয়ে একটি ট্রেন তৈরি করে তৃণমূলকে দিতে পারত। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আর রেল কর্তৃপক্ষ ট্রেন দিতে না পারায় বিষয়টি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে শুক্রবার রাতে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক বলেন,”বিজেপি আমাদের ভয় পেয়েছে। তাই বিশেষ ট্রেনের জন্য টাকা নিয়েও ট্রেন দিচ্ছে না। এখন শেষ মুহূর্তে আমাদের টাকা রিফান্ড করার কথা বলছে রেল। তবে এভাবে আমাদের থামিয়ে রাখা যাবে না।”
আর তৃণমূলের এই ঝাঁঝালো অভিযোগের পরই আসরে নামতে দেরি করেনি বাম-কংগ্রেস। তাদের দাবি তৃণমূলের এই কর্মসূচি সুপার ফ্লপ করবে। তাই বিজেপির ইশারায় রেল কর্তৃপক্ষ ট্রেন না দেওয়ায় তৃণমূল বলার জায়গা পেয়ে যাচ্ছে যে, ইচ্ছা করেই তাদের কর্মসূচি ব্যর্থ করে দেওয়া হল। রেল ট্রেন দিলে প্রতিবাদ কর্মসূচি সফল হতো বলে তৃণমূল তখন দাবি করতে পারত। এভাবেই শাসক দলের সঙ্গে বিজেপির ‘সেটিং’ তত্ত্ব তুলে ধরে কটাক্ষ করছে বাম-কংগ্রেস। বাম-কংগ্রেসের দাবি, রেল কর্তৃপক্ষ তৃণমূলের চাহিদা মতো ট্রেন দিলেও এই প্রতিবাদ কর্মসূচি সুপার ফ্লপ করত। তাই তৃণমূলকে সুবিধা করে দিতেই বিজেপি ইচ্ছা করে ট্রেন দেয়নি বলে অভিযোগ করছে তারা। যদিও রেল কর্তৃপক্ষ তৃণমূলের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে যাই ঘটে থাকুক না কেন ট্রেন না দেওয়ায় নিঃসন্দেহে তৃণমূলের প্রতিবাদ কর্মসূচি অন্য মাত্রা পেল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাসে করে কয়েক হাজার তৃণমূল কর্মী ১৬০০ কিলোমিটার দূরে থাকা দিল্লিতে পৌঁছবেন। সাম্প্রতিক অতীতে এমন ঘটনার সাক্ষী থাকেনি কেউ। তাই দিল্লিতে তৃণমূলের প্রতিবাদ কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত কতটা সফল হয় এখন সেটাই দেখার।