কলকাতা: বর্ষা বিদায়ের আগেই বাংলার আকাশে বিপর্যয়ের মেঘ৷ বুধবার সাত সকালে সিকিমে মেঘভাঙা বৃষ্টি নিয়ে এল বিপর্যয়ের অশনি সঙ্কেত৷ পরিস্থিতির গতিবিধি ভয় ধরাচ্ছে উত্তরবঙ্গে। সিকিম এবং দার্জিলিং-এর পার্বত্য ভূমি পেরিয়ে তিস্তা ঢুকে পড়েছে সমতলে৷ জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে এই নদীর জল৷ যে ভাবে জলস্তর বাড়ছে তাতে চিন্তা বাড়ছে প্রশাসনের৷ উদ্বেগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই পরিস্থিতিতে মুখ্যসচিবকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সেই নির্দেশ পেয়েই উত্তরবঙ্গের দিকে রওনা হলেন মন্ত্রিসভার প্রবীণ সদস্য এবং আইএএস আধিকারিকেরা।
বুধবার খুব ভোরে মেঘভাঙা বৃষ্টি শুরু হয় উত্তর সিকিমে। বিপুল জলরাশির চাপ ধরে রাখতে পারেনি বাঁধ। লোনক হ্রদ ফেটে জল ঢুকে পড়ে তিস্তায়৷ এক ধাক্কায় সিকিমে তিস্তা নদীর জলস্তর ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যায়। দু’কূল প্লাবিত করে নীচে সমতলের দিকে ছুটতে থাকে নদীর জল। তিস্তার রুদ্ররূপের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত আশপাশের এলাকা। নদীর খুব কাছে থাকা একটি সেনা ছাউনিও জলে ভেসে যায়। তলিয়ে গিয়েছে সেনার প্রায় ৪১টি গাড়ি৷ খোঁজ মিলছে না ওই সেনা ছাউনিতে থাকা ২৩ জন জওয়ানের। তিস্তার হড়পা বানে বহু সাধারণ মানুষও ভেসে গিয়েছেন বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। জলের তোড়ে ভেঙে পড়েছে নদীর পাশে থাকা ঘরবাড়ি৷ বাংলা তথা গোটা ভারতের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে সিকিম৷ জলের স্রোতে ধূলিস্মাৎ ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একাংশ৷ যে ভাবে পাহাড়ি সড়কের একেবারে তলায় থাকা মাটির আস্তরণ তিস্তার জলের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে, তাতে অচিরেই গোটা জাতীয় সড়ক তিস্তার গর্ভে তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
তিস্তার হাত ধরেই বিপুল পরিমাণ জলরাশি ধেয়ে আসছে উত্তরবঙ্গের দিকে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে জলপাইগুড়ি জেলা-সহ গোটা উত্তরবঙ্গ৷ বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন ঘটনার খবর পেয়েই তিনি এক্স হ্যান্ডলে বার্তা দেন। মুখ্যসচিবের উদ্দেশে তাঁর নির্দেশ, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে কাজ করতে হবে, যাতে উদ্ধারকাজে সব রকম সহায়তা করা সম্ভব হয়। কালিম্পং, দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ির নীচু এলাকা থেকে মানুষকে সরানোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশও দিয়েছে নবান্ন৷ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঘটনার খবর পেয়েই রাজ্যের সিনিয়র মন্ত্রী এবং সিনিয়র আইএএস আধিকারিকরা উত্তরবঙ্গের দিকে রওনা হয়েছেন।