পুর-নিয়োগ মামলায় এ বার বিজেপি বিধায়কের বাড়িতে CBI হানা

পুর-নিয়োগ মামলায় এ বার বিজেপি বিধায়কের বাড়িতে CBI হানা

cbi

কলকাতা: পুর-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এ বার বিজেপি বিধায়কের বাড়িতে সিবিআই হানা৷ সোমবার সকালে রানাঘাটের বিজেপি বিধায়ক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে হানা দিলেন কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দারা। এর পাশাপাশি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড় ডায়মন্ড হারবারের প্রাক্তন পুরপ্রধানের বাড়িতেও তল্লাশি অভিযানে নেমেছে সিবিআই। পুর নিয়োগ মামলার তদন্তে মীরা হালদারের বাড়িতে দানা দিয়েছেন তারা। বেশ কিছু নথির খোঁজ চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা৷ ২০১৬ সালে ডায়মন্ত হারবার পুরসভায় কর্মী নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত অয়ন শীলের সংস্থার মাধ্যমে ওই নিয়োগ হয়েছিল বলে জানতে পেরেছে সিবিআই৷ সেই সূত্রেই তারা পৌঁছেছে ডায়মন্ড হারবার৷

এদিকে, রবিবার মদন মিত্র থেকে ফিরহাদ হাকিম, রাজ্যে নয় নেতামন্ত্রী-সহ ১২ জনের বাড়িতে হানা দিয়েছিল সিবিআই৷ তাঁদের কেউ পুরসভার বর্তমান পুরপ্রধান, কেউ আবার প্রাক্তন পুরপ্রধান। সোমবার সাত সকালে তাঁরা পৌঁছল রানাঘাট৷ বিজেপি বিধায়ক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে শুরু হয়েছে তল্লাশি অভিযান৷ পার্থ সারথি রানাঘাট পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ছিলেন৷  তবে ঠিক কোন কারণে পুর-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর নাম জড়াল, সে সম্পর্কে সিবিআই-এর তরফে কিছু জানানো হয়নি। এতদিন পুরনিয়োগ মামলায় বারবার সিবিআই-এর আঁতস কাচে ধরা দিয়েছেন  শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরা৷ ঠিক সেই কারণে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগে সোচ্চার হয়েছে তৃণমূল। তবে এই প্রথম পুর নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে নাম জড়াল কোনও বিজেপি নেতার৷ রাজ্য রাজনীতির প্রেক্ষাপটে যা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

টানা ২৫ বছর রানাঘাট পুরসভায় পুরপ্রধান পদে ছিলেন পার্থসারথি। প্রথম ১৫ বছর কংগ্রেসের হয়ে, পরের ১০ বছর  কাজ করেছেন তৃণমূলের হয়ে৷  এমনকী পুরসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় শেষ ছয় মাস পুর প্রশাসন বোর্ডের সভাপতি পদেও দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটের বছর দেড়েক আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন পার্থসারথি৷ অন্যান্য দাবিদারদের টপকে তাঁকেই প্রার্থী করে তৃণমূল এবং জিতেও যান তিনি৷ পরের বছর বিধানসভা ভোটে অবশ্য কংগ্রেসের শঙ্কর সিংহের কাছে হারতে হয় তাঁকে। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন রানাঘাটের এই নেতা। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবীর ঘোষাল, বৈশালী ডালমিয়াদের সঙ্গে চার্টার্ড বিমানে দিল্লি উড়ে গিয়েছিলেন তিনিও৷ দিল্লিতে গিয়ে অমিত শাহের হাত থেকে তুলে নিয়েছিলেন পদ্ম-পতাকা। পার্থসারথী গেরুয়া হতেই তাঁকে টিকিট দেয় বিজেপি। তিনি জিতেও যান। রবিবার রানাঘাটের সেই বিজেপি বিধায়কের বাড়িতেই হানা দিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা৷ 

পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গতকাল থেকেই তল্লাশি চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা৷ মদনের ভবানীরপুর ও দক্ষিণেশ্বরের ঠিকানা ছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনার সাত জায়গায় তল্লাশি চালায় সিবিআই। তার মধ্যে কাঁচরাপাড়া, হালিশহর, উত্তর দমদম, নিউ ব্যারাকপুরে সিবিআই কর্তারা যান প্রাক্তন পুরপ্রধানদের বাড়িতে৷ তল্লাশি চালানো হয় কাঁচরাপাড়ার সুদমা রায়, হালিশহরের অংশুমান রায়, উত্তর দমদমের সুবোধ চক্রবর্তী এবং নিউ ব্যারাকপুরের তৃপ্তি মজুমদারের বাড়িতে। ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত হালিশহরের পুরপ্রধান পদে ছিলেন অংশুমান। তাঁর বাড়ির আলমারি ঘেঁটে কাগজপত্র বার করে খতিয়ে দেখেন কেন্দ্রীয় আধিকারিকরা। অন্যদিকে, তৃপ্তির পরিবার সূত্রে খবর, বাড়ি থেকে বেরোনোয় প্রাক্তন পুরপ্রধানের গাড়ির নম্বরটি নিয়ে নেন সিবিআই কর্তারা। সিবিআইয়ের সাত সদস্যের একটি দল হানা দিয়েছিল টাকি পুরসভার চেয়ারম্যান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতেও। সেখান থেকেও বেশ কিছু নথিপত্র তাঁরা সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছে। দমদম পুরসভার পুরপ্রধান হরেন্দ্র সিংহের বাড়িতেও চলে সিবিআই-এর খানাতল্লাশি৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − 11 =