পিয়ানোর মধ্যে, পাঁচিলের ভিতর কিংবা সমুদ্রের জলে… অজান্তেই মিলেছে গুপ্তধন!

পিয়ানোর মধ্যে, পাঁচিলের ভিতর কিংবা সমুদ্রের জলে… অজান্তেই মিলেছে গুপ্তধন!

fba59263a07cca543920cd53f752f467

কলকাতা: গুপ্তধন! কথাটার মধ্যেই যেন লুকিয়ে রয়েছে একটা রোমাঞ্চ৷ একটা রহস্যের হাতছানি৷ কিন্তু কপালে না থাকলে গুপ্তধন মেলা ভার৷ অপ্রত্যাশিত জায়গায় মূল্যবান সম্পদ খুঁজে পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু ভাগ্যে থাকলে অনেক সময় কসরত না করেও হাতে আসতে পারে গুপ্তধন!

আরও পড়ুন- স্বাধীনতা দিবসের দিন বন্দুকবাজার হামলায় মৃত ৯, শিকাগো যেন মৃত্যুপুরী

ঠিক এভাবেই গুপ্তধনের হদিশ পেয়েছিলেন লরা ইয়ং৷ ২০১৮ সালে টেক্সাসের একটি দোকান থেকে মাত্র ৩৫ ডলারের বিনিময়ে একটি আবক্ষ মূর্তি কিনেছিলেন তিনি৷ ভালোবেসে সেটির নাম দিয়ছিলেন ‘ডেনিস’। কিন্তু লরা জানতেনই না যে, এই আবক্ষ মূর্তিটি দু’হাজার বছরের পুরনো।

নিলাম সংস্থা ‘সদবি’র এক বিশেষজ্ঞ এই মূর্তিটি দেখার পর এর রহস্য ভেদ হয়৷ তিনি জানান, এটি গ্রিসের ‘পাগল রাজা’ কালিগুলার বাবা জার্মানিকাসের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়  জার্মানি থেকে মূর্তিটি চুরি হয়ে যায়। মূর্তি রহস্য জানার পরেই সেটিকে জার্মানি ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেন লরা৷ বর্তমানে ওই মূর্তির স্থান ‘সান অ্যান্টোনিও মিউজিয়াম অব আর্টস’-এ৷ ২০২৩ সালে মূর্তিটি জার্মানি ফিরবে৷ 

তেমনই হেলেন ফিওরাত্তির কোনও ধারণাই ছিল না, তাঁর ঘরে রাখা কফি টেবিলটি আসলে কী? পরে জানতে পেরেছিলেন, এটি ‘পাগল রাজা’ কালিগুলার নৌকার মার্বেল দিয়ে তৈরি। ইউরোপ থেকে মোজাইকটি কেনার পর বেশ কসরত করেই সেটি নিজের আমেরিকার বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন হেলেন। কিন্তু সেটির ইতিহাস সম্পর্কে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ অজ্ঞাত৷ বিষয়টি জানার পর ইটালি সেনা, পুলিশের বিশেষ বিভাগ এবং নিউ ইয়র্ক ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির সহযোগিতায় সেটিকে ইটালিতে ফেরত পাঠানো হয়।

তেমনই ইংল্যান্ডের ব্রাইটনে একটি দোকানের নীচে খোঁড়াখুঁড়ি করার সময় সেখান থেকে উদ্ধার হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার পাউন্ডের বান্ডিল৷ শোনা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানির আক্রমণের আশঙ্কায় দুই ইহুদি ভাই এরিক এবং ভিক্টর ব্র্যাডলি নিজেদের দোকানের নীচে বেশ কিছু পাউন্ড লুকিয়ে রাখেন। পরিবারের সুরক্ষার জন্য এই কাজ করেছিলেন তাঁরা৷ সেখান থেকে উদ্ধার হয় পাঁচ এবং এক পাউন্ডের নোটের প্রায় ৩০টি বান্ডিল৷ যেখানে ছিল মোট এক লক্ষ তিরিশ হাজার পাউণ্ড৷ যার বর্তমানে আনুমানিক মূল্য কুড়ি লক্ষ ডলারেরও বেশি।

ছোটবেলায় কাকিমা নোরার পিয়ানোয় হাত দেওয়া এক্কেবারে বারণ এলেন কেলির৷ ১৯৯২ সালে যখন তাঁদের বাড়ি বিক্রি করা হয়, তখন ওই পিয়ানোটিকেই মাত্র ২৫ ডলারে কিনে নেন এলেন। ২৫ বছর পর এক দিন পিয়ানোর সুর শুনে কেলির মনে সন্দেহ জাগে। পিয়ানোটি খুলে দেখেন সেখানে রয়েছে বিখ্যাত বেসবল খোলায়াড় বেব রুথ-এর ২০টি দুষ্প্রাপ্য ছবি। ২০১৯ সালে ওই ২০টি ছবি নিলামে তুলে প্রায় এক লক্ষ তিরিশ হাজার ডলার পান তিনি।

বিশ্বজুড়ে ব্রাসেলসের শাসক ইনফ্যান্টা ইসাবেলা ক্লারা ইউজিনের মোট ২০টি চিত্র রয়েছে৷ যেগুলি প্রাণ পেয়েছিল চিত্রশিল্পী অ্যান্থনি ভ্যান ডাইকের তুলির টানে। এমনই একটি চিত্র ৮৮ ডলার দিয়ে কিনেছিলেন লাইব্রেরিয়ান ক্রিস রাইট। ভেবেছিলেন এটি উচ্চমানের নকল চিত্র৷ প্রায় ৫০ বছর পর বিশেষজ্ঞরা এই চিত্রটি দেখার পর বলেন, সম্ভবত এটি অ্যান্থনি ভ্যান ডাইকের নিজের হাতে আঁকা৷ 

২০২০ সালের নভেম্বরের ঘটনা৷ বাল্টিক সাগরে রুটিনমাফিক ডাইভিং করার সময় জলের তলায় একটি টাইপরাইটিং-এর মতো যন্ত্র দেখতে পান মাইকেল সোয়াট। সেটিকে জল থেকে তুলে আনেন তিনি৷ পরীক্ষা করে দেখা যায় সেটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার বিখ্যাত জার্মান এনিগমা যন্ত্র। যুদ্ধের পর কয়েকশো এনিগমা যন্ত্র দলে ফেলা দেওয়া হয়েছিল৷ আপাতত সেটি সারাইয়ের চেষ্টা চলছে৷ 
 

১৩০০ খ্রিস্টাব্দের ঘটনা৷ উত্তরপূর্ব ফ্রান্সের বাসিন্দা এক ইহুদি মহিলা সম্পত্তি সুরক্ষিত রাখতে বাড়ির পাঁচিলের মধ্যে নিজের বিয়ের আংটি সহ মোট ১৩টি সোনার আংটি এবং ৩৮৪টি রুপোর কয়েন লুকিয়ে রেখেছিলেন। ১৮৬৩ সালে বাড়িটি মেরামতির সময় সেগুলি উদ্ধার হয়৷ সোনার গয়নাগুলি রাখা ছিল একটি পোর্সেলিনের পাত্রে৷