লন্ডন: প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার পর থেকেই একের পর এক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিলেন বরিস জনসন৷ কখনও পার্টি গেট কেলেঙ্কারি তো কখনও দলীয় সাংসদের যৌন কেলেঙ্কারির তথ্য গোপন৷ রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের কুর্সি হারানোর নেপথ্যে অনুঘটকের মতো কাজ করেছে এই সকল বিতর্ক। রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি বরিসের ব্যক্তিগত জীবনও বর্ণময়৷
আরও পড়ুন- গুলিবিদ্ধ জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি হাসপাতালে
সম্প্রতি বরিস মন্ত্রিসভা থেকে ৪০ জন সদস্য ইস্তফা দেওয়ার পরই ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে রবিসের ইস্তফার দাবি জোরদার হয়। তাঁদের অভিযোগ, প্রাক্তন সিভিল সার্ভেন্ট ও সাংসদ ক্রিস্টোফার পিনচারের যৌন কেলেঙ্কারির তথ্য গোপন করেছে প্রধানমন্ত্রীর অফিস। অভিযোগ, ক্রিস্টোফার পিনচারের বিরুদ্ধে অতীতে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ছিল৷ তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে পিনচারকে ডেপুটি চিফ হুইপ হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন বরিস। অভিযোগ, গত সপ্তাহে মত্ত অবস্থায় একটি নাইট ক্লাবে দু’জনের সঙ্গে অভব্য আচরণ করেন পিনচার । বিষয়টি জানাজানি হতেই তাঁকে কনজারভেটিভ দল থেকে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু, পিনচারের কীর্তিকলাপ নিয়ে কিছুই জানা নেই বলে দায় এড়ায় প্রধানমন্ত্রীর অফিস।
তবে বরিস জনসনকে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হতে হয়েছিল ‘পার্টি গেট’ কোলেঙ্কারির জন্য৷ এর জন্য গত মাসে অনাস্থা ভোটের মুখেও পড়তে হয় তাঁকে৷ অভিযোগ, ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে লকডাউন বিধি ভেঙে প্রধানমন্ত্রীর অফিসেই সমস্ত কর্মীদের নিয়ে পার্টি করেন বরিস। দেশবাসীকে বিধিনিষেধে আটকে রেখে ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে মদ্যপানের পার্টি ঘিরে বিতর্কে ঝড় ওঠে৷ পরে অবশ্য নিজের আচরণের জন্য রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল তাঁকে। যদিও তাঁর দাবি ছিল করোনা বিধি মেনেই পার্টি করা হয়েছে৷
এখানেই শেষ নয়৷ যৌন কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন বরিসের দুই সাংসদকে। ১৫ বছরের এক বালককে যৌন নিগ্রহের অপরাধে ইস্তফা দেন কনজারভেটিভ সাংসদ ইমরান আহমেদ খান। অন্যদিকে, ব্রিটিশ সংসদের নিম্নকক্ষ হাউস অফ কমন্সে বসে পর্নোগ্রাফি দেখার অপরাধে সংসদের সদস্য পদ হারান নীল পারিশ৷
২০২১ সালের গোড়ায় অভিযোগ ওঠে, বরিস ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট সংস্কার করতে দলের অর্থদাতাদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছেন। যদিও অর্থ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন জনসন। ওই বছর ডিসেম্বরে ব্রিটিশ নির্বাচন কমিশন জানায়, কনজারভেটিভ পার্টি দান তহবিল নিয়ে নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করেছে। এর জন্য কনজারভেটেভি পার্টিকে ১৭ হাজার ৮০০ পাউন্ড জরিমানাও করা হয়।
সাংবাদিক থেকে প্রধানমন্ত্রী কুর্সিতে বলা বরিস জনসনের ব্যক্তিগত জীবনে বরাবরই রঙিন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও চর্চার অন্ত নেই৷ বরিসের প্রথম স্ত্রী অ্যালেগ্রা মোস্টাইন আওয়েন ছিলেন শিল্প-ঐতিহাসিক উইলিয়াম মোস্টাইন আওয়েন এবং ইতালীয় সাহিত্যিক গাইয়া সার্বাদিয়োর কন্যা। ১৯৮৭ সালে অ্যালেগ্রাকে আউ ডু বলেন বরিস। কিন্তু, ছ’ বছরের মাথায় ১৯৯৩ সালে তাঁদের বিয়ে ভেঙে যায়৷
প্রথম বিয়ে ভাঙার ১২ দিনের মাথায় ফের বিয়ে করেন বরিস। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ম্যারিনা হুইলার ছিলেন পেশায় আইনজীবী। বিয়ের পাঁচ মাস পরে জন্ম হয় বরিস-ম্যারিনার প্রথম সন্তানের। বরিস ও ম্যারিনা একই সঙ্গে ব্রাসেলসের ইউরোপীয় স্কুলে পড়াশোনা করতেন। দুই পরিবারের সম্পর্কও ছিল ঘনিষ্ঠ৷ তাঁদের চার সন্তান রয়েছে। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিচ্ছেদে আইনি সিলমোহর পরে৷ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার কয়েক মাস পরেই দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় তাঁর৷
বিচ্ছেদের আগেই ২০১৯ থেকেই ক্যারি সাইমন্ডসের সঙ্গে লিভ ইন সম্পর্কে জড়ান বরিস জনসন। দু’জনের বয়সের ব্যবধান ২৪ বছর। ২০২০ সালে লন্ডনের এক হাসপাতালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তাঁর প্রেমিকা ও বাগদত্তা ক্যারি সাইমন্ডস। ক্যারি সাইমন্ডস-ই প্রথম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অবিবাহিত বাগদত্তা হিসেবে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাসিন্দা হন৷ যদিও তাঁর সম্পর্ক এবং সন্তানের আসল সংখ্যাটা অজানা বলেই অনেকে রসিকতা করে থাকেন৷
এই তিনজনের বাইরেও বরিসের সম্পর্ক ছিল৷ ২০০০ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত স্পেক্টেটর পত্রিকার কলামিস্ট পেত্রোনেল্লা ওয়াটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তাঁর৷ পেত্রোনেল্লার সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকার সাংবাদিক অ্যানা ফ্যাজাকার্লির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান বরিস। লোকে বলে বরিসের সম্পর্ক নাকি অগুনিত৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>