শাম্মী হুদা: নতুন বছর শুরু হতেই দেশবাসীর মনে হাজারো আশা ও প্রশ্ন ভিড় করেছে। যেসব সরকারি পরিষেবা নিয়ে জজনমানসে প্রচুর ক্ষোভ রয়েছে, সেগুলির কি আদৌ উন্নতি হবে? সরকারি তরফে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তাকি আদৌ পূর্ণ হবে? ইতিমধ্যেই দূরপাল্লার ট্রেনযাত্রীদের বিশ্বাস অর্জনে রেল মন্ত্রকের তৎপরতা শুরু হয়েছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠক হয়েছে। সেখানে রেলমন্ত্রী পীযুষ গোয়েলের নির্দেশিকা পেশ করা হয়েছে। যেখানে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, রেলওয়ে ক্যাটারিং পরিষেবা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। ধারাবাহিক ভাবেই অভিযোগ জমা পড়েছে আইআরসিটিসির পরিষেবার বিরুদ্ধে। তাই এবার রেলওয়ে ক্যাটারিং স্টাফ ও গোটা পরিষেবাকেই স্বচ্ছ হতে হবে।
যার প্রথমেই রয়েছে নো টিপস, হ্যাঁ ক্যাটারিং স্টাফরা যাত্রীদের থেকে কোনও টিপস নিতে পারবেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যাত্রীদের কাছে পরিষেবা বাবদ বকশিস চাইছেন আইআরসিটিসি-র সংশ্লিষ্ট স্টাফ। নির্দেশিকা বলবৎ হওয়ার পরে এই কাজ করা যাবে না।
পরেই রয়েছে নো বিল ফ্রি মিল, যদি দেখা যায় খাবার দেওয়ার পর টাকা নেওয়ার সময় ক্যাটারিং কর্মী কোনও বিল যাত্রীকে দিচ্ছেন না, তাহলে ওই যাত্রী ধরে নেবেন খাবার বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। যদি ঠিকঠাক বিল দেওয়া হয় তাহলেই যাত্রীদের খাবার বাবদ টাকা নিতে পারবেন আইআরসিটিসি-র কর্মী। এই নিয়ম চালু হলে যাত্রীদের থেকে বেশি টাকা নেওয়ার মতো গর্হিত কাজ বন্ধ হবে।
আইআরসিটিসি-র খাবারের গুণগত মান নিয়ে বারে বারে প্রশ্ন উঠেছে। গত দুবছরে মাত্রা ছাড়া অভিযোগ জমা পড়েছে।পচা খাবার, আধসিদ্ধ খাবার,কাঁচা মাংস কী নেই সেই তালিকায়। এই অভিযোগ যাতে না আসে তাই প্রতিটি ট্রেনেই লাইভ স্ট্রিমিং কিচেনের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। এতে খাবার স্বাস্থ্যকর রাখার ব্যবস্থা থাকবে। সেভাবেই খাবার যাবে যাত্রীদের কাছে। এই পদ্ধতিতে আইআরসিটিসি-র প্রতি যাত্রীদের বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
দেশের বেশকয়েকটি বৃহৎ জংশনে গ্রিন ফিল্ড কিচেনের বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যেই সেইসব জায়গায় সেটআপ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট খাতে খরচের জন্য ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দও করেছে রেল। এই স্টেশনগুলির মধ্যে রয়েছে রত্নগিরি, চেন্নাই, বিজয়ওয়াড়া, সেকেন্দ্রাবাদ, নিজামুদ্দিন-দিল্লি, হাওড়া, আমেদাবাদ, পাটনা ও কানপুর।
বলাবাহুল্য, নিরাপত্তা জনিত কারণ ছাড়াও বহু ফোন রেলের কাছে আসে।মূলত চলন্ত ট্রেনে কিছু অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে যাত্রীরা রেলের দপ্তরে অভিযোগ জানান। তবে এনিয়ে নির্দিষ্ট কোনও হেল্পলাইন নম্বর না থাকায় টুইটকরে, ইমেল করে অভিযোগ জানান যাত্রীরা।যাঁরা এসব অ্যাকসেস করতে পারেন না, তাঁদের অভিযোগ দপ্তরের নির্দিষ্ট আধিকারিকদের কাছে কখনওই পৌঁছায় না।রেলমন্ত্রীর নির্দেশিকা অনুযায়ী এবার থেকে যাত্রীদের অভিযোগ সম্বলিত একটাও ফোনকল যেন মিস না হয়। সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে।
জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যেই এসব পরিষেবা বলবৎ হয়ে যাওয়া জরুরি। শুধু তাই নয় দূরপাল্লার যাত্রীদের কাছে খাবারের মূল্যা তালিকা পৌঁছে দিতে হবে। যেখানে বড় বড় করে লেখা থাকবে, নো টিপস। যাতে যাত্রীদের কিছু অসাধু আইআরসিটিসি-র কর্মীর দ্বারা প্রতারিত না হতে হয়। একইসঙ্গে বিল না দিলে টাকা দেওয়ার দরকার নেই তাও ওই তালিকায় লেখা থাকবে।
এবার আসছে ওয়াইফাই-এর প্রসঙ্গ। এমনিতেই দেশর ৭২৩টি স্টেশনে ওয়াইফাই পরিষেবা চালু করেছে রেল। যদিও সরকারের তরফে প্রতিশ্রুতি ছিল দেশের বেশিরভাগ স্টেশনেই থাকবে ওয়াইফাই পরিষেবা। এবং এভাবেই গোটা দেশকে ইন্টারনেটের নেটওয়ার্কে নিয়ে আসবে রেল। এবার সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে উঠেপড়ে লেগেছে মন্ত্রক। খুব শিগগির দেশের ২০০০ স্টেশনকে ওয়াইফাই-এর অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। যার প্রথম সুযোগ পাবেন সংশ্লিষ্ট রেলওয়ের ডিভিশনাল ম্যানেজাররা। নতুন বছর শুরু হয়েছে, রেল মন্ত্রক আগামী মার্চ পর্যন্ত নেওয়া কার্যপদ্ধতির কতটা পূরণ করতে পারে তাই এখন দেখার।