ইডির নজরে জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ ৮০ কাউন্সিলর! বাজেয়াপ্ত জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ ২০ জনের মোবাইল!

ইডির নজরে জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ ৮০ কাউন্সিলর! বাজেয়াপ্ত জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ ২০ জনের মোবাইল!

 

80 councillors

নিজস্ব প্রতিনিধি: রেশন দুর্নীতি মামলায় বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। যাদের ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তাঁরা বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ। মোবাইলগুলি বাজেয়াপ্ত করে সেখান থেকে তথ্যের খোঁজ করছেন তদন্তকারীরা। কার কার সঙ্গে কথা হয়েছিল, লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও কথা হয়েছিল কিনা ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয় হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট থেকে খুঁজছেন তাঁরা। অন্যদিকে তদন্তকারীদের নজরে রয়েছেন রেশন দুর্নীতি মামলায় সদ্য গ্রেফতার হওয়া বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলররাও।

রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানকে গ্রেফতারের পাশাপাশি তাঁর একাধিক ঘনিষ্ঠের বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। তল্লাশি চলে বাকিবুর ঘনিষ্ঠ অভিষেক বিশ্বাসের পাশাপাশি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের আপ্তসহায়ক অমিত দে এবং প্রাক্তন আপ্তসহায়ক অভিজিৎ দাসের বাড়িতেও। আর সেই সমস্ত তল্লাশি অভিযানেই প্রায় দু’ডজন মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। এদিকে মেরুন রঙের ডায়েরির পর ইডির হাতে এসেছে আরও একটি ডায়েরি ও রেজিস্টার বুক। রেশন বণ্টন ঘিরে বিভিন্ন স্তরে কীভাবে লেনদেন হয়েছে সেই সংক্রান্ত তথ্যের পাশাপাশি সেখানে রয়েছে বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী কেনাবেচার হিসেব। এমনকী জোড়া ডায়েরি ও রেজিস্টার বুক থেকে প্রভাবশালী যোগের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। তাই দুটি ডায়েরি ও রেজিস্টার বুক থেকে পাওয়া তথ্য রেশন দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তে অন্য মাত্রা যোগ করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। জোড়া ডায়েরি ও রেজিস্টার বুক যাদের বাড়ি থেকে মিলেছে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে বলে খবর। ইডির দাবি, সংশ্লিষ্টরা বেআইনিভাবে রেশন কেনাবেচায় যুক্ত ছিলেন। সরকারি নথিভুক্ত রেশন ডিলারদের থেকে বিভিন্ন সামগ্রী কিনে তা বাইরে বিক্রি করা হতো। কবে থেকে সেই সমস্ত দ্রব্যসামগ্রী কেনা হয়েছে, কত টাকার লেনদেন হয়েছে ইত্যাদি সমস্ত তথ্য ডায়েরি ও রেজিস্টার বুকে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও তদন্তের স্বার্থে সংশ্লিষ্টের নাম ও পরিচয় সামনে আনেনি ইডি। ঘটনা হল জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ার পরই এই ডায়েরি ও রেজিস্টার বুকের বিষয়টি সামনে এসেছে। এর মধ্যে মেরুন রঙের ডায়েরিতে লেখা রয়েছে ‘বালুদা’, যা কিনা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ডাকনাম। এই নামেই রাজ্য রাজনীতিতে বেশি পরিচিত তিনি। সূত্রের খবর, ডায়েরিতে বিভিন্ন তারিখের পাশে বিপুল লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে। তদন্তকারীদের ধারণা মন্ত্রীকে ঘিরেই এই লেনদেন হয়েছে। সেই সূত্রে ডায়েরি থেকে পাওয়া তথ্যকে কাজে লাগিয়ে তদন্তের আরও গভীরে ঢুকতে চান ইডি অফিসাররা। ইডি আধিকারিকরা মনে করছেন, রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে জোড়া ডায়েরি ও রেজিস্টার বুক তদন্তে অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

এর পাশাপাশি রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলরদের উপরেও এবার নজর রাখতে শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় ২৭টি পুরসভা রয়েছে। সেই পুরসভাগুলিতে মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলরদের উপর নজর রয়েছে গোয়েন্দাদের। তবে কি রেশন দুর্নীতির টাকা ঢুকেছে কাউন্সিলরদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও? এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারছে না ইডি। কারণ মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি দীর্ঘদিন উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। তাই জেলার বিভিন্ন পুরসভার বহু কাউন্সিলরের সঙ্গে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকবে এটা ধরে নেওয়াই যায়। সেই সূত্রে ইডি জানতে পেরেছে, মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের অ্যাকাউন্টে আর্থিক লেনদেন হয়েছে। ইতিমধ্যেই ২৭টি পুরসভার প্রায় ৮০ জন কাউন্সিলরের নামের তালিকা ইডি গোয়েন্দারা তৈরি করেছেন বলে খবর। জানা গিয়েছে ওই কাউন্সিলরদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট  সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে খোঁজখবর চালাবে ইডি। তাঁদের আয়-ব্যয় ও সম্পত্তির হিসেব খতিয়ে দেখা হবে। এমনকী তদন্তের স্বার্থে তাঁদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর। সবমিলিয়ে রেশন তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *