tmc
নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল সিঙ্গুর তথা টাটাদের তৎকালীন প্রস্তাবিত ন্যানো কারখানা। যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় বয়ে যায়। সেই সিঙ্গুর নিয়ে এবার বড় রায় দিল আরবিট্রাল ট্রাইবুনাল। যে রায়ে জোর ধাক্কা খেল রাজ্য। সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ির কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় টাটা মোটরসকে ৭৬৫.৭৮ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। তিন সদস্যের আরবিট্রাল ট্রাইবুনাল সোমবার এই নির্দেশ দিয়েছে বলে টাটা গোষ্ঠীর তরফে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে টাটা গোষ্ঠী জানিয়েছে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ১১ শতাংশ হারে সুদও দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। তবে এই নির্দেশকে রাজ্য সরকার চ্যালেঞ্জ করতে চলেছে বলেই খবর।
সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠী ন্যানো গাড়ির কারখানা গড়ে তুলতে চেয়েছিল। তার জন্যে তৎকালীন বাম সরকার জোর করে জমি অধিগ্রহণ করেছে, এই অভিযোগ তুলে সিঙ্গুর তথা রাজ্যজুড়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন সংঘটিত করেন তিনি। যদিও তার মধ্যেই রাজ্য সরকার সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করে। সেই জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করেন কৃষকদের একাংশ। বিদ্রোহী অনিচ্ছুক কৃষকদের প্লিজ লাঠিপেটা করছে এই দৃশ্য আজও টাটকা রাজ্যবাসীর কাছে। সেই ঘটনায় গোটা দেশ জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এরপর অনিচ্ছুক চাষীদের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূল আন্দোলন শুরু করে, যার নেতৃত্ব দেন মমতা। আর ধারাবাহিক আন্দোলনের জেরে ২০০৮ সালে টাটা গোষ্ঠী ন্যানো প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গ থেকে তুলে নিয়ে যায়।
এরপর ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষীদের জমি ফেরত দিতে আইন তৈরি করেন। ততদিনে গুজরাটের সানন্দে ন্যানো কারখানা সরিয়ে নিয়েছিল টাটা গোষ্ঠী। ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় জানিয়ে দেয় অতীতে বামফ্রন্ট সরকার জমি অধিগ্রহণের সময় নিয়ম মানেনি। তাই সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে সর্বোচ্চ আদালত। এরপর বিরোধ সমাধানের জন্য মধ্যস্থতাকারী প্যানেলের সহায়তা চেয়েছিল টাটা গোষ্ঠী। এই পরিস্থিতিতে সোমবার ট্রাইব্যুনাল জানিয়ে দিল টাটা গোষ্ঠীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। এ প্রসঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সংবাদ মাধ্যমে বলেন,”পশ্চিমবঙ্গের বেকারদের স্বপ্ন ভাঙার পেনাল্টি দিতে হচ্ছে। টাকার পাশাপাশি সুদ দিতে হবে। অঙ্কটা ১৬০০ কোটি টাকার বেশি হবে।”
ঘটনা হল টাটা গোষ্ঠী যেভাবে রাজ্য ছেড়ে চলে গিয়েছে তার জেরেই পশ্চিমবঙ্গে কোনও শিল্পপতি শিল্প করতে আগ্রহী হচ্ছেন না বলে মনে করে ওয়াকিবহাল মহল। তাই এটা স্পষ্ট সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের জেরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসলেও তাঁকে এখনও সমানভাবে বিঁধে চলেছে সিঙ্গুর-কাঁটা। এই পরিস্থিতিতে বড় রায় দিল আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনাল। এবার রাজ্য সরকার বিষয়টি নিয়ে কী পদক্ষেপ করে সেটাই দেখার।