পলাতক প্রেসিডেন্ট, পদত্যাগ প্রধানমন্ত্রীর! জনতার তাড়ায় কালঘাম ছুটে যাচ্ছে রাষ্ট্রপ্রধানদের!

পলাতক প্রেসিডেন্ট, পদত্যাগ প্রধানমন্ত্রীর! জনতার তাড়ায় কালঘাম ছুটে যাচ্ছে রাষ্ট্রপ্রধানদের!

নিজস্ব প্রতিনিধি:  রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত করেন জনতা জনার্দন। আবার তাঁরাই নিমেষে পাশা উল্টে দিতে পারেন। ক্ষুব্ধ জনতাকে সামলানো রাষ্ট্রপ্রধানদের পক্ষে যে সম্ভব নয় তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি। যেখানে জনতার তাড়া খেয়ে বিলাসবহুল রাজপ্রাসাদ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে। আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহ। তবে জনতার দাবি মতো পদত্যাগ করতে চাইছেন না প্রেসিডেন্ট। যদিও পরে পরিস্থিতির চাপে মত বদলেছেন তিনি। শোনা যাচ্ছে বুধবার পদত্যাগ করবেন গোতাবায়া।

শনিবার প্রাসাদের দখল নেয় হাজার হাজার জনতা। জনতার দাবি অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে প্রেসিডেন্টকে। বহুদিন ধরেই গণবিক্ষোভে জ্বলছে শ্রীলঙ্কা। শনিবার বিক্ষোভকারীরা রাজধানী কলম্বোয় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের প্রাসাদে ঢুকে পড়ে। তবে তার আগেই প্রেসিডেন্টকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এ খবর সামনে আসতেই জনতা উন্মত্ত হয়ে ওঠে। টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটিয়ে, লাঠিচার্জ করে এমনকী শূন্যে গুলি ছুঁড়েও জনতাকে থামাতে পারেনি পুলিশ। অবস্থা যে এমন পর্যায়ে যাবে সেটা শুক্রবারই আন্দাজ করেছিল শ্রীলঙ্কা সেনা। কারণ শুক্রবার দুপুর থেকেই দেশের পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হতে শুরু করে। বাসে, ট্রেনে, গাড়িতে করে হাতে শ্রীলঙ্কার জাতীয় পতাকা নিয়ে দলে দলে মানুষ আসতে থাকেন রাজধানী কলম্বোয়। প্রশাসনের বাধা উড়িয়ে রেল কর্তৃপক্ষকে ট্রেন চালাতে বাধ্য করে জনতা।   তখন শ্রীলঙ্কা সেনা বুঝে যায় ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে পড়তে চলেছেন প্রেসিডেন্ট। তাই বিন্দুমাত্র দেরি না করে শুক্রবার রাতেই প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষেকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয় সেনা। আর শনিবার সকালে এ খবর সামনে আসতেই বাধ ভেঙে যায় মানুষের। কার্ফু উপেক্ষা করে তারা প্রাসাদের দিকে ধেয়ে আসে। তখন পুলিশ তাদের আটকাতে শূন্যে গুলি চালায়, কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায়। তাতে জনতার ক্ষোভের আগুনে যেন ঘৃতাহুতি পড়ে। ব্যারিকেড ভেঙে স্রোতের মতো মানুষ ঢুকে পড়তে শুরু করে রাজাপক্ষের প্রাসাদে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রাসাদ চত্বরের দখল নিয়ে নেয় উন্মত্ত জনতা। সেই সময়কার ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে  বিক্ষোভকারীদের একাংশ রাজাপক্ষের প্রাসাদের সুইমিং পুলে নেমেছে। কেউ আবার ভিড় করেছে রান্নাঘরে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে গিয়েছে শ্রীলঙ্কা প্রশাসনের।

ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে শ্রীলঙ্কার এই পরিস্থিতি প্রত্যেকটি দেশের কাছে শিক্ষণীয়। একশ্রেণির রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তাঁরা নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমজনতাকে বোকা বানিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। এই অভিযোগ উঠছে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপ্রধানদের বিরুদ্ধেও। সে দেশে দীর্ঘদিন মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পাচ্ছেন না।  বিদ্যুৎহীন অবস্থা চলছে ঘন্টার পর ঘন্টা, সঙ্গে চরম জ্বালানি সংকট রয়েছে। এছাড়া তলানিতে এসে থেকেছে চিকিৎসা পরিষেবা। অথচ এই অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে না শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্টকে, এমনটাই অভিযোগ দেশবাসীর। শ্রীলঙ্কার ঘটনা বুঝিয়ে দিল দেশবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করার চেষ্টা করলে সাধারণ মানুষ ছেড়ে কথা বলবেন না। চিনের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নেওয়ার কারণেই আজ দেশটির এই অবস্থা হয়েছে। দেশবাসীর অভিযোগ তাঁদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে এ পথে হেঁটেছে শ্রীলঙ্কা। স্বাভাবিকভাবেই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে মানুষের ক্ষোভ চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। তাই দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিকে প্রাণভয়ে প্রাসাদ ছেড়ে পালাতে হচ্ছে। এটাও তাহলে দেখার ছিল? তাই পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হয় সেদিকেই নজর থাকবে সবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 − one =