Mamata
কলকাতা: ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ ভোটের কথা কে ভুলতে পেরেছে। অন্যান্য নির্বাচনের থেকে সেটা যে আলাদা ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই নির্বাচনে সরাসরি টক্কর দিতে দেখা গিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীকে, তাও আবার নন্দীগ্রামে। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েই শুভেন্দু যেন লাভা উগরেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল এবং সরকারের বিরুদ্ধে। ফলত গোটা দেশের নজর ছিল নন্দীগ্রামের ওপর। সেই ভোটে কী ফল হয়েছে তাও সকলের জানা। কী ভাবে হয়েছে সেটা নিয়ে অবশ্য এখনও বিতর্ক জারি। তবে মমতা বনাম শুভেন্দু যে আবার হতে পারে, তার আঁচ ইতিমধ্যেই মিলেছে।
আর দু’মাস। তারপর শুরু হবে ২০২৪ সাল, অর্থাৎ লোকসভা ভোটের আর বেশি দিন বাকি নেই। ইতিমধ্যেই সব রাজনৈতিক দলগুলি অল্পবিস্তর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে নির্বাচনের। বিরোধীরা তো নয়া আঙ্গিকে ‘ইন্ডিয়া’ জোটও গঠন করে ফেলেছে। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে বাংলায় কী হবে, তা নিয়ে কৌতূহল কম নয়। তবে আপাতত যে বিষয় নিয়ে সবথেকে বেশি চর্চা, তা হল লোকসভা ভোটে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী দ্বৈরথ। আসলে বিষয়টি নিয়ে হইহই শুরু হয়েছে তার কারণ, খোদ শুভেন্দু অধিকারী কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁর হুঁশিয়ারি, তিনি একবার হারিয়েছেন, লোকসভা ভোটে মমতা যেখানে দাঁড়াবেন, সেখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা হবে।
শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ করেননি শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর এবং তাঁর সরকার যে বছরের পর বছর চুরি করেছে এসেছে সেই অভিযোগ আবারও করেছেন তিনি। শুভেন্দুর কথায়, ‘চোর মমতা, ডাকাত মমতা। তাঁর পরিবারকে দিয়ে তিনি লুট করিয়েছেন।’ তাঁর দাবি, মমতার পরিবারের একাধিক ব্যক্তির হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি আছে। কিন্তু বিজেপির নেতারা সৎ রাজনীতিবিদ। তাদের সকলের আয়কর রিটার্ন আছে। চেয়ার, টেবিলের হিসেব আছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এইসব নিয়ে বক্তব্য কী? না, তিনি চুপ থাকবেন এটা ভাবা ভুল। এদিন নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ইস্যুতে বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন। যদিও কোনও নাম নেননি। কিন্তু তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, তিনি কার বা কাদের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন। মমতা এদিন বলেন, এখন বিজেপি ক্ষমতায় আছে তাই যা ইচ্ছা করছে। একদিন ক্ষমতায় থাকবে না, সেদিন কিন্তু ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়বে। তাঁর কথায়, কারা কারা কোথা থেকে টাকা নিচ্ছে তিনি জানেন। মমতা ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে বলেন, কারোর ৬০-৭০ টা ট্রলার আছে, কত বেনামি বাড়ি, পেট্রোল পাম্প আছে। কত কোটি কোটি টাকা আছে। তারা বড় বড় কথা বলে কী করে, প্রশ্ন তাঁর। মমতার এক্ষেত্রে হুঁশিয়ারি, তারাও কাগজপত্র বের করছেন।
একটা কথা বলাই যায়, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাংলার এই দুর্নীতি ইস্যু ভীষণভাবে প্রভাব যে ফেলবে তা এখন থেকে আরও স্পষ্ট হচ্ছে। ইতিমধ্যেই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জেলে আছেন। ইডি-সিবিআইয়ের নজর তৃণমূলের আরও একাধিক নেতা, সদস্যের ওপর। দেখার বিষয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিবির গোটা ইস্যুকে কী ভাবে মানিয়ে চলে।