কলকাতা: কেন্দ্র রাজ্য সংঘাতের মধ্যেই এদিন বিধানসভায় বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। ততক্ষণে তৃমমূলের বিরোধিতায় ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেছেন বিরোধী নেতার। এই হট্টগোলের মধ্যেই চলল বাজেট অধিবেশন। শুরুতেইকেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে ছাড়লেন না তিনি, সাফ জানিয়েদিলেন গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় বার বার আঘা হানছে বিজেপি, যা দুর্ভাগ্যজনক। কেন্দ্রের কোনওরকম ষড়যন্ত্রকে বরদাস্ত করা হবে না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব দেশকে পথ দেখাচ্ছে।
চলতি আর্থিক বর্ষে বাংলার কৃষকদের গড় আয় তিনগুণ বাড়লেও দেশে কৃষকদের অবস্থা শোচনীয়। তাঁদের আয় বৃদ্ধি দূরে যাক কেন্দ্রের খামখেয়ালিপনায়কৃষকদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। বেশ কয়েকহাজার কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে, এই মুহূর্তে দেশে বেকারের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি। অলীক প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রে হস্তক্ষেপের প্রবণতা থেকে সুপ্রিমকোর্টও রেহাই পায়নি।গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় আঘাত অব্যাহত রয়েছে। দেশের নামী ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে গা-ঢাকা দিয়েছেন, এর জেরে ব্যাংকগুলি দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। শেষপর্যন্ত মেয়াদ শেষের আগে অভিসন্ধিমূলক এক্সপায়ারি বাজেট পেশ করে জনসমর্থন ধরে রাখতে চাইছে কেন্দ্র।
এরপরই বিরোধীদের বিক্ষোভের মধ্যেই বাজেটের নির্ঘণ্ট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। জানান, মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ও যারা ৩ বছরের কর্মী হিসেবে গ্রুপ ডি-তে কাজ করেছেন তাঁরা গ্রুপ সি-তে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাদের এক্সগ্রাসিয়া ৩ লাখ টাকা করা হল, চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের আরও ২০০০ টাকা করে বাড়ানো হল। গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মীদের ২০০০ টাকা করে বাড়ানো হল। চা শিল্পের উপর সেস মকুব থেকে শুরু করে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা করে বাড়ল। ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারি থেকে এই নির্দেশিকা কার্যকর হবে। ৫০ হাজার যুবক-যুবতিকে এককালীন ১ লাখ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেবে রাজ্য। নতুন স্কিমে ১১০০ কোটি টাকা বকেয়া কর আদায় শুরু হবে। ই-কমার্স সংস্থা ফ্লিপকার্ট লজিস্টিক হাব তৈরি করছে হরিণঘাটায়, সেখানে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে ওই সংস্থা, এর বিনিময়ে ১০ হাজার কর্মসংস্থানও তৈরি হবে হরিণঘাটায়। সংখ্যালঘুদের জন্য ৪৪৫টি ছাত্রছাত্রী আবাসন তৈরি হয়েছে।
৭ হাজারেরও বেশি প্রাইমারি স্কুল তৈরি হয়েছে, কৃষ্ণনগরে কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হচ্ছে, ঠাকুরনগরে মতুয়া গুরু হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হচ্ছে। এখন সবমিলিয়ে রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪০টি। মেডিক্যাল কলেজও ১০টি, রাজ্যে ৪২টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হয়েছে। রাজ্যে প্রসূতি মৃত্যুর হার ১১৩ থেকে কমে হয়েছে ১০১, শিশুমৃত্যুর হার কমে হয়েছে দুই। ফসলবিমা যোজনায় ২৪ লক্ষ কৃষক নথিভুক্ত হয়েছেন, এই প্রকল্পে কেন্দ্রের থেকে কোনও টাকা নিচ্ছে না রাজ্য। গত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩২ লাখ কৃষককে টাকা দিতে ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, কৃষকদের ১ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা দেওয়া হয়েছে। ধান দিন-চেক নিন প্রকল্পে ফসলের বিনিময়ে কৃষকদের সরাসরি টাকা মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। খাদ্যসাথী প্রকল্পে স্বল্পমূল্যে ৮ কোটি ৮২ লক্ষ মানুষকে কমদামে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। পরিকল্পনা খাতে ৩ লক্ষ ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। কর বাবদ আয় ২১ হাজার ১২৮ কোটি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৭ হাজার ৭০০ কোটি হয়েছে রাজস্ব ঘাটতি ৪.২৭ থেকে নেমে ২.৮৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে ও ৩.৭৫ শতাংশ থেকে নেমে রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ০.৯৬ শতাংশে। বাংলায় শিল্পে বৃদ্ধির হার ১৬.২৯ শতাংশ , GDP বৃদ্ধির হারে বাংলা ১ নম্বর স্থানে আছে বলেও জানান তিনি৷