CPI(M)
নিজস্ব প্রতিনিধি: বহুদিন ধরেই চাপ বাড়ছিল দলের উপর। সেটা ভাল করেই বুঝতে পারছিলেন রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব। কিন্তু এবার সর্বোচ্চ পর্যায়, অর্থাৎ দলের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা সীতারাম ইয়েচুরিকে বাংলায় এসে বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে হল। তৃণমূলের উপস্থিতিতে বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটে কেন তাঁরা রয়েছেন সেটা বুঝিয়ে বললেন তিনি। সেই সঙ্গে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন যে, লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে একটি আসনেও সমঝোতা করবে না সিপিএম। এছাড়া তৃণমূলকে অসৎ ও অগণতান্ত্রিক দল বলেও তীব্র আক্রমণ করেছেন ইয়েচুরি।
শুক্রবার থেকে হাওড়ায় সিপিএমের জেলা পার্টি অফিসে দলের রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশন শুরু হয়েছে। সেই অধিবেশনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় ইয়েচুরি বলেন,”ভারতকে বাঁচানোর লক্ষ্যে ইন্ডিয়া জোট তৈরি হয়েছে। দেশকে যদি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় তাহলে অবশ্যই আগে দেশকে বাঁচাতে হবে। সেই কাজে যাঁরা আসতে চান তাঁদের সবাইকে নিতে হবে”। সেই সঙ্গে বলেন,”লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে কোনও আসন সমঝোতা হবে না। কেরলে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিধানসভায় আমরা দু’বার জিতেছি। কিন্তু লোকসভায় কংগ্রেস কুড়িটি আসনের মধ্যে ১৯টিতে আমাদের হারিয়ে দিয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে আছি। লোকসভা নির্বাচন আসতে এখনও কিছুটা সময় বাকি আছে। এই সময়কালে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে যাবে।”
এরপরই ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূলের উপস্থিতিতে কেন তাঁরা রয়েছেন সেখানে তা বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি। ইয়েচুরি বলেন,”আমাদের লক্ষ্য বিজেপিকে হারানো। তাই আমরা এই কাজে যারা তৈরি আছি তাঁদেরকে জোটে আহ্বান করেছি। বিজেপির বিরুদ্ধে যারা যারা লড়াই করবে তাদেরকে স্বাগত। পরে কি হবে সেটা পরে দেখা যাবে”। সেই সঙ্গে তৃণমূলকে নিশানা করে বলেন,”তৃণমূল একটা অসৎ ও অগণতান্ত্রিক দল। তারা কোনও দিন বিজেপির বিকল্প হতে পারে না। তাই তারা যদি জোটে এসে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে চায় তবে আমরা স্বাগত জানাব। তবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বিজেপির স্থান একমাত্র নিতে পারে বাম ও আমাদের জোট।”
বেঙ্গালুরুতে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে ইয়েচুরি রয়েছেন, এমন ছবি সামনে আসতেই রাজ্য জুড়ে বাম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এর ফলে বামেদের ভোট ফের রামের দিকে চলে যাবে এমন জল্পনা শুরু হয় রাজ্য জুড়ে। ঘটনা হল পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলায় জেলায় বহু বাম কর্মী-সমর্থক শাসকদলের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আহত বা নিহত হয়েছেন। এরপরই এক মঞ্চে মমতা-ইয়েচুরিকে দেখা যাওয়ায় তা নিয়ে সিপিএমের নীচুতলায় ক্ষোভ জন্মাবে এটাই স্বাভাবিক। আর ইয়েচুরি নিজেও বিষয়টি ভালভাবেই জানেন। তাই এদিন নিজেই সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে ইয়েচুরি বলেন,”আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে কেন ছিলাম তা নিয়ে আপনারা প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিষয়টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকা নয়। গোটা দেশ জানে অতীতে বিজেপির শরিক ছিল তৃণমূল। আগামী দিনে দরকার হলে তারা আবার বোঝাপড়া করতে পারে। কিন্তু সার্বিকভাবে একটা ধারণা থেকে ‘ইন্ডিয়া’ জোট তৈরি হয়েছে। তাতে যারা আসতে চায় তাদের সবাইকে নিতে হবে।” আর সেই সূত্রেই ইয়েচুরি স্পষ্ট করে দেন যে, ‘ইন্ডিয়া’ কোনও নির্বাচনী জোট নয়। তাই লোকসভায় তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএম তথা বামেদের আসন সমঝোতা যে কোনও ভাবেই হবে না, তা বাংলায় এসে স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। এদিন সীতারাম বারবার এটাই জানিয়েছেন যে, কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিজেপিকে সরানোর চেষ্টা তাঁরা করে চলবেন। আর বাংলায় আইএসএফের সঙ্গে আসন সমঝোতা করা হবে কিনা সেটা আগামী দিনে আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আসলে ইয়েচুরি এটাই বোঝাতে চেয়েছেন কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে হটানোর বাধ্যবাধকতা থেকেই ‘ইন্ডিয়া’ জোটে অবিজেপি দল হিসেবে তৃণমূল রয়েছে। আর সেখানে প্রত্যাশিতভাবে সিপিএমও থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এর বেশি আর কিছু নয়। তাই তৃণমূলের উপস্থিতিতে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে সিপিএম কেন রয়েছে এভাবেই সেটা বোঝাতে চেয়েছেন ইয়েচুরি। বলা ভাল এভাবে ব্যাখ্যা দিতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছেন তিনি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে আগের চেয়ে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে সিপিএম তথা বামেরা। সেই জায়গা থেকে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তৃণমূলের সঙ্গে একমঞ্চে সিপিএম থাকায় দলের কর্মী-সমর্থকদের মনে যথেষ্ট ধাক্কা লেগেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে এসে সেই কারণটাই স্পষ্ট করলেন ইয়েচুরি।