নয়াদিল্লি: মোদীর নোট বাতিলের জেরে ৫০লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। যাঁরা এই কাজ হারালেন তাঁরা সকলেই অসংগঠিত শ্রমিক। তাঁরা হলেন সমাজের সবচেয়ে বিপন্ন অংশের মানুষ, যাঁদের প্রতিদিনের রুটি রুজির কোনও নিশ্চয়তা থাকে না। আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সাসটেইনেবল এমপ্লয়মেন্ট (সিএসই) তাদের সমীক্ষা রিপোর্টে এই তথ্য মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে।
সিএসই তাদের স্টেট অফ ওয়ার্কিং ইন্ডিয়া, ২০১৯ রিপোর্ট প্রকাশ করে জানিয়েছে, সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ২০১৬সাল থেকে পরের দুই বছরে দেশের কর্মচিত্রের ছবি খুব আশাব্যঞ্জক নয়। এই সময়ে নোট বাতিলের ফলে কাজ হারিয়েছেন বিপুল অংশের মানুষ। দেশে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হারের (জিডিপি) যতই বৃদ্ধি হোক না কেন শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে কর্মসংস্থানের তা বৃদ্ধি ঘটায়নি। দেশে এই সময় কর্মরত শ্রমিকের হার ক্রমশ কমেছে। কর্মহীন শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে। এদিন রিপোর্ট প্রকাশ করে সিএসই’র পক্ষে অধ্যাপক অমিত বাসোলে বলেন, দেশে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ হারানো মানুষের সংখ্যা হবে প্রায় ৫০ লক্ষ। এই সময়ে মোদী সরকারের নোট বাতিল ও পণ্য পরিষেবা কর অসংগঠিত শিল্পে চরম আঘাত হানে। এতে বন্ধ হয়ে যায় ছোট শিল্প ও কারবার।
ফলে এই নোট বাতিল ও পণ্যপরিষেবা কর ছাড়া অন্য কোনও কারণ দেখা যাচ্ছে না বিপুল কর্মহানির। ২০১৪ সালে মোদী ক্ষমতায় আসার আগে বছরে ২কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রতিশ্রুতি পালনের কোনও চিহ্ন এই সময়ে দেখা যায়নি তা স্পষ্ট হয়েছে এই রিপোর্টে। যেখানে পরিষ্কার বলা হয়েছে, যতটুকু কাজ হয়েছে তার থেকে কাজ খোয়া গেছে বেশি। ফলে দেশে এই সময়ে বেকারির হারও বেড়েছে। বাসোলে বলেছেন, বেকারি নিয়ে আমরা সিএমআইই ২০১৬ ও লেবার ব্যুরোর ২০১৫ সালের রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখেছি। তারাও জানিয়েছে বেকারির হার এই সময়ে বিপুল হারে বাড়ছে। এতে পুরুষদের থেকে মহিলাদের বেকারি আরও বেশি হারে বেড়েছে। রিপোর্টে বেকারি ও কাজ হারানোর কয়েকটি সাধারণ প্রবণতার উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১১ সালের পর থেকে বেকারির হার চড়া হারে বাড়তে থাকে। তা ২০১৮ সালে ৬%-এ গিয়ে পৌঁছায়। এই বেকারির হার বেশি হলো উচ্চশিক্ষিতদের ক্ষেত্রে। এটাই ভারতের বেকারির মূল প্রবণতা। বেকারদের মধ্যে বড় অংশের বয়স হলো ২০ থেকে ২৪ বছর। বেকার শ্রমিকের মধ্যে মহিলা বেকার শ্রমিকের সংখ্যা বেশি।
এদিন সিএসই রিপোর্টে বলা হয়েছে, তারা সেন্টার অব মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমির (সিএমআইই) সমীক্ষা রিপোর্ট খতিয়ে দেখেছে। সেখানে মেয়াদ ভিত্তিক পিরামিড পরিবার ভিত্তিক সমীক্ষা করা হয়েছিল। তাতে যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তবে মোদী সরকার ইপিএফের রিপোর্ট নিয়ে যে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির দাবি করেছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রকাশিত রিপোর্টে দেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে নির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে। তা হলো, শহর কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্প, সরকারি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা পরিষেবায় কর্মী নিয়োগ বাড়ানো, উৎপাদন শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রভৃতি।