balu
নিজস্ব প্রতিনিধি: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য এবং প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় হাতে হাত মিলিয়ে রীতিমতো ‘মানিকজোড়’ হয়ে বিশাল দুর্নীতি ঘটিয়েছেন বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা মনে করছেন। একই ভাবে রেশন দুর্নীতি মামলায় বালু-বাকিবুর ‘জুটি’ বেঁধে দুর্নীতি করে গিয়েছেন বলে তদন্তকারীরা একপ্রকার নিশ্চিত। রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত একাধিক রাইস মিল তথা বিপুল সম্পত্তির মালিক বাকিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পরেই সেই সূত্রে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
আর তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই দেখা যাচ্ছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, যিনি বেশি পরিচিত বালুদা নামে, সেই বালু-বাকিবুর জুটি কার্যত ‘মানিকজোড়’ হিসেবেই দুর্নীতি চালিয়ে গিয়েছেন, এমনটাই মনে করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। বহুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে এই দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করবেন ইডি আধিকারিকরা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেটা করা হয়নি। তাই সেই জেরা কবে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তবে ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, বাকিবুর রহমান দুর্নীতির কালো টাকায় যে বিপুল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন সেখানে শুধু প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক নন, রাজ্যের আরও এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলেই সেটা করা সম্ভব হয়েছে। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে ইডি সূত্রে। ইডি হেফাজতে লাগাতার জেরা চলছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। আর তারই মধ্যে রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে উঠে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। সদ্য জানা গিয়েছে কোনও রকম সুদ বা সিকিউরিটি ছাড়াই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের স্ত্রী-কন্যাকে ৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিলেন বাকিবুর। তদন্তকারীদের ধারণা সেটা ঋণ নাও হতে পারে। এমনও হতে পারে ঋণের নামে সেই টাকাটা ‘ভেট’ হিসেবে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।
এর পাশাপাশি ইডি আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন রেশন বণ্টন মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত বাকিবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয়েছিল একটি ভুয়ো কৃষক সংগঠন। সেখানকার সদস্যদের মাধ্যমে বিপুল শস্য কেনাবেচা হয়েছে বলে হিসেবে দেখানো হয়েছিল। তাঁদের অ্যাকাউন্টে অবৈধ ভাবে পৌঁছে যায় সরকারি টাকা।
এভাবেই বিপুল অঙ্কের কালো টাকা সাদা করা হয়েছিল বলে নিশ্চিত ইডি। সূত্রের খবর এই ভুয়ো ‘ফার্মার্স ফোরাম’ নিয়ন্ত্রণ করতেন বাকিবুর রহমান নিজেই। এ ব্যাপারে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কাছেও তথ্য ছিল বলে ইডি আধিকারিকরা মনে করছেন। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে খবর। সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট আগে থেকে আঁটঘাট বেঁধে দুর্নীতির মহাসাগরে ডুব দিয়েছিলেন বাকিবুর রহমান ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। এই পরিস্থিতিতে দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে পারলে আরও তথ্য যে পাওয়া যাবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।