bakibur rahman
নিজস্ব প্রতিনিধি: সময় যত গড়াচ্ছে ততই রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানের নানা কীর্তির কথা সামনে আসছে। এবার ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে রাজ্যের বেশ কয়েকটি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির যাবতীয় ‘অ্যাক্সেস’ ছিল এই মামলায় ধৃত বাকিবুর রহমানের হাতে। তাঁর হাতেই সমিতিগুলির আইডি ও পাসওয়ার্ড ছিল। সেই সূত্রে সমিতির যাবতীয় কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করতেন বাকিবুর। তাই কৃষি উন্নয়ন সমিতির তালিকায় একের পর এক ভুয়ো কৃষকের নাম নথিবদ্ধ করা হয়েছে। আর এভাবেই কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বাকিবুর ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সঙ্গীরা। ইডি আধিকারিকরা নিশ্চিত মাথার উপর বড় হাত থাকার কারণেই দিনের পর দিন এভাবে দুর্নীতি করে যেতে পেরেছেন বাকিবুর। আর এই পাসওয়ার্ড কাণ্ডে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জড়িত কিনা সেটাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। এছাড়া খাদ্য দফতরের কোনও আধিকারিক ও কর্মী এই ঘটনায় যুক্ত আছেন কিনা সেটাও তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন।
উল্লেখ্য বাকিবুর গ্রেফতার হওয়ার পরই রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসতে থাকে। বহু আগেই বাকিবুরের বেশ কয়েকটি রাইস মিল ও ফ্লাওয়ার মিলে তল্লাশি চালিয়ে তদন্তকারীরা একশোর বেশি স্ট্যাম্প ও সিল উদ্ধার করেছেন। তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন বাকিপুরের রাইস মিলগুলি রাজ্য সরকারের নথিভূক্ত ছিল। যে মিলগুলিতে আসত রেশনের চাল। আর সেই চাল সরিয়ে কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় প্যাকেট বন্দি করে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করা হতো। ইডি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, যে একশোটির বেশি স্ট্যাম্প ও সিল উদ্ধার হয়েছে তার মধ্যে খাদ্য দফতরের সঙ্গে যুক্ত একাধিক সরকারি আধিকারিকের স্ট্যাম্পও রয়েছে।
এছাড়া ছিল একাধিক জেলার সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির স্ট্যাম্প এবং সিল। সেই সমস্ত স্ট্যাম্প কীভাবে বাকিবুর রহমানের কাছে গেল তা তদন্ত করে দেখা হয়। এরপর কৃষি উন্নয়ন সমিতির বেশ কয়েকজন আধিকারিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। তাতেই ইডি নিশ্চিতভাবে জানতে পারে সমিতির আইডি ও পাসওয়ার্ড বাকিবুরের কাছেই ছিল। এখানেই শেষ নয়, সমিতির কর্মচারীদের দিয়ে সেখানকার কম্পিউটার ইচ্ছামতো ব্যবহার করতেন বাকিবুর। আর সেভাবেই ভুয়ো কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হতো।
তদন্তকারীর আরও জানতে পেরেছেন কৃষকদের একাংশ শস্য ফলিয়ে সরকারি সমবায়কে না দিয়ে এজেন্টদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হতেন। আর সেই এজেন্টরা বাকিবুরেরই লোক। কিন্তু মজার কথা হল এজেন্ট মারফত ধান-সহ অন্যান্য জিনিস কেনা হলেও সমবায় সমিতির রেকর্ডে দেখানো হতো সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে সেগুলি কেনা হয়েছে। এমনকী ধান বিক্রির কত টাকা সংশ্লিষ্ট কৃষকের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে সেই তথ্যও বাকিবুরের হাতে নিমেষে চলে আসত। এভাবে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে তদন্তকারীরা নিশ্চিত। আর এই অনিয়মের সঙ্গে কোন কোন মাথা জড়িত রয়েছেন সেটাই খতিয়ে দেখছেন ইডি আধিকারিকরা। বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছেন বাকিবুর। যেভাবে নিত্যনতুন তথ্য সামনে আসছে তাঁকে নিয়ে, তাতে বাকিবুরের জামিন পাওয়া কঠিন। তাই আগামী দিনে এই রেশন দুর্নীতি মামলায় আর কি কি তথ্য উঠে আসে সেটাই দেখার।