১২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর মমতার মুখে ‘রাজনৈতিক বদলা’র কথা! ‘দুর্বল বিরোধী’দের ভয় পাচ্ছে তৃণমূল?

১২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর মমতার মুখে ‘রাজনৈতিক বদলা’র কথা! ‘দুর্বল বিরোধী’দের ভয় পাচ্ছে তৃণমূল?

mamata

নিজস্ব প্রতিনিধি:  বদলা নয় বদল চাই। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রচারে এই স্লোগান দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। পরবর্তীকালেও বারবার ‘বদলা নয় বদল চাই’ এই স্লোগান শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। কিন্তু চব্বিশের মেগা লোকসভা নির্বাচনের আগে সবকিছু যেন ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এখন ‘রাজনৈতিক বদলা’র কথা শোনা যাচ্ছে। যা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। ঘটনা হল বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলীয় বৈঠকে বিজেপির বিরুদ্ধে বেশ  আক্রমণাত্মক ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি নাম না করে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে বলেছেন, ”আমি বিশ্বাস করি না কেষ্ট , পার্থ, বালু চোর। ওরা আমার চার জন বিধায়ককে জেলে ভরে রেখেছে, আমি ওদের আট জনকে জেলে ভরব। আমাদের লোকেরা সবাই চোর? দুর্নীতি দেখাচ্ছে! সংবাদমাধ্যমকে বলা হচ্ছে, তৃণমূলকে চোর না বললে ইডি-সিবিআই তাদের দফতরে হানা দেবে। আজকে খুব হাসছেন? ভাবছেন কেষ্ট জেলে, পার্থ জেলে, আমাদের আরও কয়েকজন জেলে। এটাই চলবে? আগামী দিনে আপনারা যখন চেয়ারে থাকবেন না, তখন কোথায় থাকবেন? সেলে?”  এখানেই থেমে থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন,”এবার বদলা নিতে হবে। রাজনৈতিকভাবে বদলা নিতে হবে। বুথে বুথে ওদের হারিয়ে ব্যাগে ভরে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে হবে।”

 

কিন্তু একটা কথা এখানে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল বারবার দাবি করে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস এবং সিপিএম সাইনবোর্ড হয়ে গিয়েছে। বিজেপিও দিনদিন দুর্বল হচ্ছে। একুশের ভোটের পর যতগুলি উপনির্বাচন হয়েছে তার প্রত্যেকটিতে হেরেছে বিজেপি। সাগরদিঘি ছাড়া একই ভাবে প্রত্যেকটিতে হেরেছে কংগ্রেস এবং সিপিএম। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তৃণমূল প্রত্যাশিতভাবে বিপুল জয় পেয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও তৃণমূল কী ভয় পেতে শুরু করেছে? এই ভয় থেকেই কি খোদ মুখ্যমন্ত্রী ‘রাজনৈতিক বদলা’র কথা বলছেন? আর ভয় পেলে সেটা কিসের ভয়? উল্লেখ্য নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি নাম করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর হয়ে কথা বলছেন, এটা গত এক বছরে একবারও দেখা যায়নি। তাই মুখ্যমন্ত্রী লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে যেভাবে ‘রাজনৈতিক বদলা’র কথা বলছেন, তাতে নানা প্রশ্ন উঁকি মারছে। তবে কী আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে নতুন কোনও ‘রাজনৈতিক ধামাকা’ দেখা যাবে? সিবিআই-ইডির তৎপরতা আরও বাড়বে? যে সমস্ত দুর্নীতির ঘটনায় তদন্ত চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, সেই সূত্রে আরও বড় নাম সামনে আসবে? সেই কারণেই কি মুখ্যমন্ত্রী নতুন করে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করতে শুরু করলেন? রাজনৈতিক মহল মনে করছে ‘অফেন্স ইজ দ্যা বেস্ট ডিফেন্স’, এভাবেই মুখ্যমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে চাইছেন বিজেপিকে।

 

বড় অঘটন না ঘটলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তৃণমূলের ফল খুব ভাল হবে এটা ধরে নেওয়াই যায়। কারণ রাজ্যে বিরোধীদের ছন্নছাড়া অবস্থা দেখা যাচ্ছে। বিজেপি দিন দিন ভাঙছে। তাদের দলের বিধায়ক ও জেলা স্তরের নেতারা তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। একই ভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেস ও সিপিএমের টিকিটে জয়ী হওয়া ব্যক্তিদের একটা  অংশ তৃণমূলে নাম লেখাচ্ছেন।  কিন্তু এত কিছু পরেও রাজনীতির ময়দানে তৃণমূল কেন স্বস্তি পাচ্ছে না সেই প্রশ্ন উঠছে। সম্ভবত সেই জায়গা থেকেই মুখ্যমন্ত্রীকে এবার ‘রাজনৈতিক বদলা’র কথা বলতে শোনা গেল। যা কিনা মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের ‘স্ট্যান্ড পয়েন্ট’-এর সঙ্গে মেলে না। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *