ওয়াশিংটন: ৯/১১৷ ২১ বছর আগে ঠিক এই দিনেই আমেরিকার ওয়াল্ড ট্রেড সেন্টারে ভয়াবহ নাশকতা চালিয়েছিল বিশ্ব ত্রাস হয়ে ওঠা জঙ্গি সংগঠন আল কায়দা। মৃত্যু হয়েছিল অন্তত তিন হাজার মানুষের। মার্কিন নাগরিকদের কাছে ৯/১১ আজও এক বিভীষিকা৷ সেই ভয়াবহতায় শিউরে উঠেছিল গোটা দুনিয়া। তবে, সেই ক্ষত সারিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। ৯/১১ হামলার মূলচক্রীদের এক এক করে খুঁজে বার করে শাস্তি দিয়েছে ওয়াশিংটন। সময় লেগেছে ঠিকই৷ কিন্তু, অপরাধীদের রেয়াত করেনি তারা৷ আজ মূলচক্রীদের কেউ জেলের চার দেওয়ালে পচছে। কারও মৃত্যু হয়েছে ওসামা বিন লাদেন বা আয়মান আল-জাওয়াহিরির মতো।
২০০১ সালে যখন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা চালায় আল কায়দা, তখন জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষে ছিলেন ওসামা বিন লাদেন। এই হামলা ছিল মূলত তাঁর মস্তিস্কপ্রসূত৷ ৯/১১-র হামলার সেই মূল ষড়যন্ত্রী লাদেনকে এক দুঃসাহসিক অভিযানে খতম করে আমেরিকার নেভি সিল। পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদে লাদেনের গোপন আস্তানায় ঢুকে তাঁকে নিকেশ করে মার্কিন সেনা। সেই সময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা৷ তাঁর আমলেই হয়েছিল অপারেশন ‘নেপচুন স্পিয়ার’।
৯/১১ হামলার অপর এক চক্রী ছিলেন আয়মান আল জাওয়াহিরি। মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো সংগঠন ঘুরে আল কায়দায় সামিল হন মিশরীয় ওই শল্য চিকিৎসক৷ লাদেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তাঁর। লাদেনের ব্যক্তিগত চিকিৎসকও ছিলেন জওয়াহিরি। লাদেনের মৃত্যুর পর আল কায়দার শীর্ষ নেতা হন তিনি। দীর্ঘ দিন ধরেই জাওয়াহিরির খোঁজে ছিলেন মার্কিন গোয়েন্দারা৷ তাঁরা জানতে পারেন, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের শহরতলিতে একটি বাড়িতে নিরাপদে রয়েছেন আল কায়দা প্রধান। ওই বাড়িটির বারান্দায় দীর্ঘ সময় কাটাতেন জাওয়াহিরি। সেই সুযোগ নিয়েই গত ৩১ জুলাই ড্রোন হামলা চালিয়ে তাঁকে হত্যা করে মার্কিন সেনা৷
টুইন টাওয়ার হামলার অন্যতম চক্রীর নাম খালেদ শেখ মহম্মদ ওরফে কেএসএম। বিমানের মাধ্যমে এমন ভয়াবহ হামলার চিন্তা এসেছিল তাঁর মাথাতেই। আমেরিকার প্রথম ১০ জন মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকার থাকা কেএসএম-কে ২০০৩ সালে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি থেকে গ্রেফতার করে সিআইএ। ২০০৬ সাল থেকে গুয়ান্তানামো বে কারাগারে বন্দি রয়েছেন ৫৭ বছরের এই জঙ্গি।
টুইট টাওয়ার ধ্বংসের নেপথ্যে উঠে আসে আরও একটি নাম-আম্মর আল বালুচি৷ হামলাকারীদের অর্থ-সহ অন্যান্য সাহায্য করেছিলেন বছর চুয়াল্লিশের ওই কুয়েতি নাগরিক। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষ বালুচিকে ২০০৩ সালের ২৯ এপ্রিল গ্রেফতার করে পাকিস্তানি রেঞ্জার্স। এর পর তাঁকে তুলে দেওয়া হয় আমেরিকার হাতে। আপাতত গুয়ান্তানামো বে কারাগারে রয়েছেন এই জঙ্গি নেতা।
আল কায়দার অন্যতম প্রবীণ সদস্য সৌদি আরবের বাসিন্দা মুস্তাফা আল হাবসাবি সংগঠনের অর্থ সংক্রান্ত বিষয় দেখতেন। ২০০৩ সালে পাকিস্তান থেকে ধরা পড়েন ৫৩ বছরের হাবসাবি৷ ২০০৮ সালে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়৷ তবে তা এখনও কার্যকর হয়নি৷
৯/১১-র অপর এক চক্রী তথা ইয়েমেনের বাসিন্দা ওয়ালিদ বিন আত্তাশ ছিলেন আল কায়দায় লেফটেন্যান্ট৷ তিনি ছিলেন লাদেনের দেহরক্ষী৷ ২০০৩ সালে পাকিস্তানের করাচি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পাক রেঞ্জার্স৷ এখন সিআইএ হেফাজতে রয়েছেন তিনি৷
ইয়েমেনের আরেক বাসিন্দা রামজি বিন আসল শিভ ছিলেন কেএসএমের প্রতিনিধি৷ ২০০২ সালে ধরা পড়ার পর থেকে সিআইএ হেফাজতেই আছেন৷
যে বিমান দু’টি টুইন টাওয়ারে ধাক্কা মেরেছিল তার একটিতে ওঠার কথা ছিল ৯/১১-র হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রী মহম্মদ আল কাথানি। কিন্তু, হামলার কয়েক মাস আগে কাথানির আমেরিকা সফরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ২০০২ সালে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত থেকে গ্রেফতার হওয়ার পর ২০ বছর জেল খাটে কাথানি৷ আপাতত তিনি মুক্ত৷ কাথানিকে ততটা ভয় পাওয়ার কিছু নেই বলেই মনে করছে সিআইএ। অভিযোগ, জেলে কাথানির উপর চরম অত্যাচার চালানো হয়েছিল৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>