matuas
নিজস্ব প্রতিনিধি: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ নিয়ে কোনও বড় ঘোষণা করলেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শুধু বলতে শোনা গিয়েছে এই আইন অবশ্যই কার্যকর করা হবে। কিন্তু কবে হবে তা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি তিনি। যা হতাশ করেছে লক্ষ লক্ষ মতুয়া সমাজের মানুষকে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে পশ্চিমবঙ্গে এসে সিএএ নিয়ে কিছু বলতে হয়, তাই শাহ সেই আইন কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন। তবে সেটা যেন বলতে হয় তাই বলা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে শোনা যায়নি।
আর চার মাস পর লোকসভা নির্বাচন। যা দরজায় কার্যত কড়া নাড়ছে। তার আগে বহু চর্চিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ ইস্যুতে মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বুধবার ধর্মতলার সমাবেশ থেকে রাজ্য সরকারকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে অমিত শাহ বলেন,” সিএএ (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন) গোটা দেশের আইন। বাংলার সরকার এই আইন কোনও ভাবেই রুখতে পারবে না।” ঘটনা হল সিএএ নিয়ে গত চার বছর ধরে বিতর্ক অব্যাহত। এই আইনের সাহায্যে মূলত ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, পার্সি, খ্রিস্টান ও জৈন শরণার্থীরা পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে নাগরিকত্ব পাবেন। কিন্তু মুসলিম-সহ অন্য কোনও বিদেশি শরণার্থীদের জন্য সিএএ লাগু হবে না। আর সেই তালিকায় মুসলিমদের রাখা হয়নি বলেই অ-বিজেপি দলগুলি সোচ্চার হয়েছে।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আগে মতুয়াদের নাগরিকত্বের আশ্বাস দিয়েছিল বিজেপি। কেন্দ্রে দ্বিতীয় বার সরকারে এসে সংসদে সেই আইন পাশ করানো হয়। যা নিয়ে দেশ জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তবে এখনও পর্যন্ত এই আইন কার্যকর করা হয়নি। যে বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া সমাজের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। যদিও বিজেপির দাবি, এই আইন অবশ্যই কার্যকর করা হবে। এই অবস্থায় বুধবার ধর্মতলার সমাবেশ থেকে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “সিএএ কেন্দ্রের আইন। রাজ্য চেষ্টা করলেও সেটা আটকাতে পারবে না। বাংলায় অনুপ্রবেশে মদত দিচ্ছে তৃণমূল। তাই সিএএ কার্যকর করতে চান না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এটা দিল্লির আইন। চেষ্টা করলেও এটাকে রুখতে পারবেন না।” এখানেই শেষ নয়, শরণার্থীদের উদ্দেশে শাহ বলছেন, “এ দেশের একজন হিন্দু নাগরিকের যতটা অধিকার, শরণার্থীদের অধিকারও ঠিক ততটাই।”
সম্প্রতি রাজ্যে এসে সিএএ নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র। তিনি জানান, আগামী বছরের ৩০ মার্চের মধ্যে এ বিষয়ে খসড়া তৈরি করা হবে। উত্তর চব্বিশ পরগণার ঠাকুরনগরে মতুয়া সম্প্রদায়ের একটি সভায় অতিথি হিসেবে এসেছিলেন তিনি। সেখানে অপর কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা মতুয়া সমাজের অন্যতম প্রধান মুখ শান্তনু ঠাকুরও উপস্থিত ছিলেন। সেদিন মতুয়াদের আশ্বস্ত করে অজয় মিশ্রকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “গত কয়েক বছরে সিএএ নিয়ে কাজ চলছে। সেখানে সমস্যা কিছু দেখা দিয়েছে। তবে তার সমাধান করা হচ্ছে। মতুয়াদের থেকে কেউ নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে পারবে না। আপনাদের নাগরিকত্ব সুরক্ষিত থাকবে। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে সিএএ-র চূড়ান্ত খসড়া তৈরি হয়ে যাবে। তারপরই আইন আসবে বলে আশা করছি।” যদিও তৃণমূলের অভিযোগ, ভোটের দিকে তাকিয়ে বিজেপি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে। সেই সঙ্গে তৃণমূলের দাবি মতুয়ারা সবাই নাগরিক। অথচ সিএএ নিয়ে রাজনীতি করছে গেরুয়া শিবির। ঘটনা হল পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ মতুয়া সমাজের মানুষ অধীর আগ্রহে সিএএ কার্যকর হওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্র বহু বার আশ্বাস দিলেও সেই কাজ এগোয়নি। এখন ভোটের মুখে বনগাঁ, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর, বারাসত-সহ মতুয়া অধ্যুষিত বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রে জেতার লক্ষ্যেই যে রাজ্যে এসে অমিত শাহ এ বিষয়ে মুখ খুলতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছেন সেটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। যা একেবারেই খুশি করেনি মতুয়াদের। এর প্রভাব ভোটবাক্সে কতটা পড়ে সেটাই দেখার।