suvendu
নিজস্ব প্রতিনিধি: বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নিশানায় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি সমানভাবে রয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত দু’বছর ধরে শুভেন্দু বারবার হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন, তিনি মমতাকে প্রাক্তন করে তবে ছাড়বেন। একই ভাবে বিগত কয়েক মাস ধরে তিনি অভিষেককেও প্রাক্তন করার হুঙ্কার দিতে শুরু করেছেন। কিন্তু কেন? শুধুই কি ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে অভিষেককে হারানোর জন্যেই তিনি এমন কথা বলছেন? নাকি শুভেন্দুর অন্য কোনও লক্ষ্য রয়েছে? সম্প্রতি শুভেন্দুকে বিষয়টি নিয়ে ফের যে কথা বলতে শোনা গিয়েছে তা হল, “ডায়মণ্ড হারবারে ভোটে দাঁড়ালে পিসির মতো দশা করব। হারিয়ে প্রাক্তন করে গ্যারেজ করে দেব। ভাইপো একবার ডায়মণ্ড হারবারে দাঁড়াক, কী করে হারাতে হয়, কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দেব। পিসিকে যেমন হারিয়েছি, তেমনই প্রাক্তন করে গ্যারেজ করে দেব।”
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীকে নন্দীগ্রাম আসনে শুভেন্দু হারিয়েছিলেন। এখনও শুভেন্দু মমতাকে যে কারণে ‘কম্পার্টমেন্টাল সি এম’ বলে খোঁচা দিয়ে থাকেন। তাই প্রশ্ন মমতা-অভিষেক দু’জনকে প্রাক্তন করার ডাক শুভেন্দু কেন বারবার দিচ্ছেন? এর কারণ একটাই, লোকসভা নির্বাচনে বিশেষ ন্যারেটিভ তৈরি করা। এমন পরিস্থিতি তৈরি করা যাতে ৪২ টি লোকসভা কেন্দ্রেই লড়াইটা সীমাবদ্ধ থাকে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। অর্থাৎ প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রে একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতি তৈরি করার জন্যেই শুভেন্দু লাগাতার মমতা ও অভিষেককে প্রাক্তন করা ডাক দিয়ে হাওয়া গরম করতে চাইছেন বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করছে। সেক্ষেত্রে তৃণমূল বিরোধী ভোটের পুরোটাই শুভেন্দু গেরুয়া শিবিরের দিকে নিয়ে আসতে চাইছেন। আর সেটা হলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি রাজ্যে যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে নিশ্চিত ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে শুভেন্দু অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন।
ঘটনা হল এখনও বেশ কিছু লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস ও সিপিএমের বাঁধা ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে। দলের হাল আরও খারাপ হলেও সেই ভোট অন্য কোথাও যাবে না। আর শুভেন্দু টার্গেট করেছেন সেই ভোটটাকেই। শুভেন্দু ভাল করেই বুঝতে পারছেন সেই ভোটের সিংহভাগ যদি বিজেপির দিকে চলে আসে তাহলে পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ফল গতবারের থেকেও ভাল হওয়া সম্ভব। সবচেয়ে বড় কথা শুভেন্দুর নিজের জেলায় যে দুটি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে, সেই তমলুক এবং কাঁথিতে তিনি বিপুল মার্জিনে তৃণমূলকে হারানোর ডাক দিয়েছেন। কিন্তু সেখানেও তৃণমূল বিরোধী ভোট যদি বাম-কংগ্রেস কাটে তাহলে শুভেন্দুর লক্ষ্যপূরণ হওয়াটা কঠিন হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে।
সবচেয়ে বড় কথা শুভেন্দু জানেন লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপির ফল ভাল হলে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তাঁর গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে। কারণ একুশের নির্বাচনের পর থেকেই তিনি নিয়মিত যেভাবে গোটা বাংলায় চষে বেড়াচ্ছেন, তা অন্য কোনও বিজেপি নেতাকে করতে দেখা যায় না। তাই বিজেপির ভাল ফল হলে সেই কৃতিত্বের সিংহভাগ শুভেন্দুই যে পাবেন তা স্পষ্ট। আর সেই কারণেই শুভেন্দু চাইছেন মমতা-অভিষেককে একযোগে আক্রমণ করে তৃণমূল বিরোধী ভোটের পুরোটাকেই নিজেদের দিকে নিয়ে আসতে। তাই শুধু অভিষেককে ডায়মন্ড হারবারে হারানোই নয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই তাঁর এই প্রয়াস। কারণ নিশ্চিত ভাবে শুভেন্দুর মূল লক্ষ্য শীর্ষপদ দখল করা। তাই মমতাকে হারানোর পর আগামী দিনে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে অভিষেক সত্যিই যদি হারেন, আর সেক্ষেত্রে যদি শুভেন্দুর ভূমিকা থাকে, তাহলে নিশ্চিত ভাবে আগামী দিনে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে শুভেন্দুকে সামনে রেখেই বিজেপি বাংলায় লড়বে ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে। আর ভবিষ্যতের কথা ভেবেই যে শুভেন্দু নিয়মিত মমতা ও অভিষেককে একযোগে প্রাক্তন করার ডাক দিয়ে চলেছেন, তা স্পষ্ট।