covid
কলকাতা: বছর শেষে ফের চোখ রাঙাচ্ছে করোনা৷ শীত পড়তেই ফুঁসতে শুরু করেছে মারণ ভাইরাস৷ বড়দিন ও বর্ষশেষের উৎসবের আমেজে কাঁটা হয়ে হাজির কোভিড-১৯৷ শুধু তাই নয়, ভারতে মিলেছে নয়া স্ট্রেনের হদিশ৷ চিন্তা বাড়াচ্ছে জেএন.১৷ যা কিনা ওমিক্রনের সাব ভ্যারিয়েন্ট বিএ.২.৮৬-এর একটি মিউটেশন। সম্প্রতি কেরলে ৭৯ বছরের এক মহিলার শরীরে মিলেছে করোনা ভাইরাসের এই নয়া প্রজাতির হদিশ৷ নতুন ভ্যারিয়েন্টের পাশাপাশি সংক্রমণের উর্ধ্বমুখী গ্রাফ নিয়েও চিন্তায় বিশেষজ্ঞমহল৷ ঘটছে মৃত্যুও৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে করোনার বলি ৫৷ যার মধ্যে ১ জন উত্তর প্রদেশের এবং বাকি ৪ জনই কেরলের বাসিন্দা। অন্যদিকে, দেশজুড়ে অ্যাকটিভ করোনা রোগীর সংখ্যা ২,০০০ ছুঁইছুঁই। তবে এখানে উঠে এসেছে আরও একটা প্রশ্ন, কেন ডিসেম্বরেই লাফিয়ে বাড়ে করোনার সংক্রমণ?
এর আগে দেখা গিয়েছে, ডেল্টা হোক বা ওমিক্রন, শীতেই শুরু হয়েছিল ভাইরাসের প্রথম ঢেউ। এবার জেএন.১-এর দেখা মিলল সেই ডিসেম্বরেই৷ গত ৮ ডিসেম্বর কেরলে প্রথম জেএন.১ আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মেলে৷ শরীরে ইনফ্লুইয়েঞ্জার লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন ওই বৃদ্ধা৷ কোভিড পরীক্ষা করালে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। নড়েচড়ে বসে সে রাজ্যর সরকার৷ গ্রহণ করা হয় বিশেষ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা৷ কেরল সংলগ্ন রাজ্যগুলিকেও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকও। ইতিমধ্যে বেশ কিছু হাসপাতালে মক ড্রিলও করা হয়েছে৷
শুধু ভারতই নয়, গোটা বিশ্বজুড়ে জেএন.১ প্রজাতিকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়তে শুরু করেছে। সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়ার মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতেও থাবা বসিয়েছে করোনার এই নয়া প্রজাতি৷ গত এক সপ্তাহে মালয়েশিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ভয় ধরাচ্ছে সিঙ্গাপুরও৷ সেখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে।
যদিও প্রথম জেএন.১-এর সন্ধান মেলে লুক্সেমবার্গে ৷ তার পর থেকে বিশ্বের ৩৮টিরও বেশি দেশে কোভিডের নয়া স্ট্রেন ছড়িয়ে পড়ে৷ আরও একবার লাফিয়ে বাড়তে শুরু করোনা সংক্রমণ৷ স্বস্তি একটাই, ভারতে এখনও পর্যন্ত একজনের দেহেই নয়া প্রজাতির খোঁজ মিলেছে৷ তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন থেকেই সতর্ক হতে হবে৷ চারিদিকে এখন উৎসবের মেজাজ৷ এই সময় সামান্য অসাবধানতাও বিপদ ডেকে আনতে পারে৷
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, জেএন.১ অতিরিক্ত স্পাইক মিউটেশন বহন করে৷ তবে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা শক্তিশালী হলে, এই প্রজাতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে খুব একটা অসুবিধা হবে না। অর্থাৎ, জেএন.১ আপনার দেহে প্রবেশ করলেও তা সহজে কুপোকাত করতে পারবে না৷ কারণ, আগের চেয়ে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে৷ ৯০ শতাংশ মানুষ কোভিডের টিকা নিয়ে ফেলেছেন৷ এখন লড়াইটা কিছুটা হলেও সহজ৷ তবে অবশ্যই মেনে চলতে হবে কোভিড বিধি৷ মাস্ক পড়ুন৷ জ্বর, সর্দি-কাশি, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, পেটের সমস্যা দেখা দিলেই RT-PCR পরীক্ষা করিয়ে নিন৷ পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
জেএন.১ নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিয়ে নারাজ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা৷ হু-র সিনিয়র এপিডেমিওলজিস্ট ডঃ মারিয়া ভ্যান কেরখোভ সতর্ক করে বলেছেন, ‘‘জেএন.১-এর কারণে যে কোনও অবস্থা দেখা দিতে পারে। উপসর্গহীন সংক্রমণ থেকে শুরু করে ভয়াবহ অসুস্থতা এমনকী মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। ওমিক্রনের অন্যান্য সাবলাইনেজগুলির ক্ষেত্রেও এমনটাই দেখা গিয়েছিল।’’ করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি একটি অ্যাডভাইজারিও জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু৷ সেখানে সতর্ক করে বলা হয়েছে, সার্স-কোভ-২ ভাইরাস বিবর্তিত হচ্ছে এবং দেশে দেশে তা ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞ পালমনোলজিস্ট চিকিৎসক বিবেক নাঙ্গিয়ার কথায়, ‘‘আমাদের চারিপাশে এখনও কোভিড ১৯-এর অস্তিত্ব রয়েছে এবং একটি বার বার ফিরে আসবে। আবারও কোভিড-বিধি মেনে চলার সময় এসে গিয়েছে। সেই দিনগুলির কথা ভুলে গেলে চলবে না।’’