নয়াদিল্লি: পরামর্শ বা দাবি সবক্ষেত্রেই ব্যর্থ প্রমাণ করে দিন দিন ভেঙে পড়ছে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড। ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে ইন্টারন্যাশনাল মিটারিং ফান্ড। অর্থাৎ বিশ্ববাজারেও এই ভঙ্গুর দশা স্পষ্ট। গতকালই আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা মুডি’স আর্থিক বৃদ্ধির হারে ভারতকে আরও পেছনে ঠেলেছে।
কিন্তু অর্থনীতির ভাবমূর্তি কোনপ্রকারে ধরে রাখতে একপ্রকার দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য কেন্দ্র। কেন্দ্রের এমনইসব হঠকারি প্রচেষ্টায় ঘুম উড়েছে কর কর্মকর্তাদের। উল্লেখ করা যায় এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে করেই ‘ব্ল্যাকশিপ’ বলেছিলেন মোদি। বলছিলেন প্রশাসনিক স্তরে কর্মরত এই ধরনের কর কর্মকর্তারা যেভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করে করদাতাদের হেনস্থা করছে তাদের বরদাস্ত করা হবেনা। কিন্তু মুখে যাই বলুন দেশের অর্থনৈতিক ঘাটতি সামলাতে এই কর্মকর্তারাই যে অন্যতম প্রধান ভরসা। তাদের কর্মপদ্ধতিও অর্থমন্ত্রকের নির্দেশিকা মেনে।
যেমন এইমুহূর্তে রাজধানী দিল্লির আর্থিক ঘাটতি সামাল দিতে এবার প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একদিকে কর্পোরেট ক্ষেত্রে বড়সড় রাজস্ব ছাড় দিয়েছেন যা প্রত্যক্ষ করেরও অংশ। তারপরেও ১৭ শতাংশ বেশী প্রত্যক্ষ কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছেন। এক্ষেত্রে আবার ব্যবসায়ীদের ওপর যেন কোনো প্রভাব না পড়ে সে বিষয়েও সতর্ক করেছেন কর্মকর্তাদের। এমন অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রায় রীতিমত সন্ত্রস্ত তারা। এর বড়সড় প্রভাব যে তাদের কাজের ক্ষেত্রেও পড়তে পারে সে বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দায়িত্ব নিয়ে করফাঁকি রুখতে গেলে তাদের অনেকেরই বিরাগভাজন হতে হবে বলেই মনে করছেন কর্মকর্তারা।
অর্থমন্ত্রীর নির্মলা সীতারমণের একের পর এক পরিকল্পনা, আর তার ওপর ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নানান নির্দেশিকা ও কার্যকরী করার প্রচেষ্টা, সরকারের বিভ্রান্তিকর অর্থনৈতিক নীতির দিকটিকেই যে তুলে ধরছে এবং এই ধরণের নীতিই যে অর্থনৈতিক নিম্নগতির কারণ তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন কর্মকর্তারা। মোদি সরকারের দিশাহীন অর্থনীতির চাপে দিশেহারা হয়ে চলতি বছরে এপর্যন্ত শীর্ষ স্তরের কর বিভাগের ২২ জন কর্মকর্তা স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং গতবছর ৩৪ জন এই একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এমনই ভয়ঙ্কর তথ্য তুলে ধরেছেন ‘ট্যাক্স গেজেটেড অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের’ সহ-সভাপতি ভাস্কর ভট্টাচার্য। তাঁ
মতে ২৫-৩০ বছরের অভিজ্ঞ আধিকারিকদের পক্ষেও সরকারি দিশাহীন পদক্ষেপের কোনো সুরাহা নেই। তাই চাপ সামলাতে না পেরে তারাও একে একে স্বেচ্ছাবসরের আবেদন জমা করছেন। কিন্তু মজার বিষয় হলো এই দফতরে এরকম কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং কর দফতরের উচ্চপদ যেন ‘শাঁখের করাত’ হয়ে উঠেছে কর কর্মকর্তাদের কাছে।
যদিও এই বিভাগে নীচু স্তরের কর্মীদের মধ্যেও চিত্রটা আলাদা কিছু নয়। বিস্তর চাপ সেখানেও। তাই আভ্যন্তরীণ স্থানান্তর এবং স্বেচ্ছাবসর নিচ্ছেন অনেকেই। ভাস্কর বাবুর মতে আমলাতান্ত্রিক চাকরিগুলি আপাতদৃষ্টিতে শক্তিশালী ও মর্যাদাপূর্ণ বলে মনে হলেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তা নয়। যদিও করের লক্ষ্যমাত্রা বা ট্যাক্স কর্মকর্তাদের দ্বারা হয়রানির বিষয়ে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস ও অর্থমন্ত্রকের মুখে কুলুপ।