গোলাপী বিপ্লবের উৎসবে কেমন আছেন দেশের মহিলারা?

সুনন্দা বারুই: ‘পিঙ্ক টেস্টে’ র উন্মাদনায় মহানগরী আক্ষরিক অর্থেই ‘পিঙ্ক সিটি’৷ ‘পিঙ্ক বলে’র রঙের সাজ তিলোত্তমার আনাচকানাচ৷ এই পিঙ্ক বা গোলাপী রঙ নিয়ে মানুষের উদ্দীপনা ভারত-বাংলাদেশ দিন-রাতের টেস্ট ম্যাচকে আলাদাই মাত্রা দিয়েছে৷ এক অজানা কারণেই গোলাপীতে মেতে উঠেছেন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ক্রিকেটপ্রেমীরা৷ আসলে গোলাপী এমন একটি সূক্ষ্ম রঙ যার সঙ্গে মিলে মিশে আছে মিষ্টি, সুন্দর, রোমান্টিক,

গোলাপী বিপ্লবের উৎসবে কেমন আছেন দেশের মহিলারা?

সুনন্দা বারুই: ‘পিঙ্ক টেস্টে’ র উন্মাদনায় মহানগরী আক্ষরিক অর্থেই ‘পিঙ্ক সিটি’৷ ‘পিঙ্ক বলে’র রঙের সাজ তিলোত্তমার আনাচকানাচ৷ এই পিঙ্ক বা গোলাপী রঙ নিয়ে মানুষের উদ্দীপনা ভারত-বাংলাদেশ দিন-রাতের টেস্ট ম্যাচকে আলাদাই মাত্রা দিয়েছে৷ এক অজানা কারণেই গোলাপীতে মেতে উঠেছেন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ক্রিকেটপ্রেমীরা৷ আসলে গোলাপী এমন একটি সূক্ষ্ম রঙ যার সঙ্গে মিলে মিশে আছে মিষ্টি, সুন্দর, রোমান্টিক, কমনীয়, কোমলতা৷ গোলাপী হল নিজের এবং অন্যের প্রতি সর্বজনীন ভালবাসার রঙ৷ গোলাপী রঙ বন্ধুত্ব, স্নেহ, সম্প্রীতি, অভ্যন্তরীণ প্রশান্তি এবং সহজলভ্যতার প্রতিনিধিত্ব করে৷ সর্বপরি এই গোলাপী রঙ এখন স্ত্রীলিঙ্গের প্রতীক৷ কিন্তু, সর্বোত সুন্দর এই রঙের মাহাত্ম্য সত্যিই কি নারীর অস্তিত্বকে সমৃদ্ধ করেছে? একবিংশ শতাব্দীতেও কিন্তু এই প্রশ্নই এখন বিশ্বজুড়ে৷ নারী শুধুমাত্র একটি সত্তা নয়৷

সভ্যতার ইতিহাসে নারী শক্তির অবস্থান এবং অবদান যেমন অনস্বীকার্য৷ তেমনই জাতি গঠনের ক্ষেত্রেও নারীর অবদান এককভাবে স্বীকৃত৷ জাতিকে নিয়ে মনুসংহিতায় উল্লিখিত আছে “যত্র নার্য্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ৷ যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ৷৷” যার মূল অর্থ হল, যে সমাজ নারীকে যথাযোগ্য সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখায় সেই সমাজ উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি লাভ করে৷ আর না হলে বিফলে যায় সব কাজ৷

নারী তার মেধা, বুদ্ধি, যোগ্যতা, শ্রম এবং মমতার সংমিশ্রণে গড়ে তুলেছে ভবিষ্যতের ভিত, জন্ম দিয়েছে নতুন ইতিহাসের৷ কিন্তু সামাজিক বিশেষত আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নারী জাতির মূল্যায়ন এখনও যথার্থ ভাবে হয়নি বলেই মনে করেন সমাজবিদেরা৷

বৈদিক যুগের আদি পর্বে নারীরা জীবনের সকল ক্ষেত্রেই পুরুষের সঙ্গে সমানাধিকার ভোগ করেছে৷ আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব ৫০০ শতকে নারীর অবস্থার অবনতি শুরু হয়৷ আজ আধুনিক বিশ্বেও নারী সমাজকে প্রতিটি পদক্ষেপে নানান সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে৷ বিশেষত কাজের মাধ্যমে স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রে৷ এর মূল কারণ হিসেবে ২০১১সালের সেন্টার ফর ওমেন ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ এর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে একবিংশ শতকেও বন্দীদশাই নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অন্তরায়৷ তার মূল কারণ নিরাপত্তা৷

তাই বাড়ির কাজের মধ্যেই তাদের কর্মদক্ষতার সীমাবদ্ধ রাখতে হয়৷ সমাজে নারীর সঠিক অবস্থান নির্ধারণে ব্যর্থতা নারীকে ভোগ্য পণ্যে রূপান্তরিত করেছে৷ তাই গৃহীনিরা সংসার নামক কর্মক্ষেত্রে উদয়াস্ত পরিশ্রমের পরেও তার যোগ্য মূল্য পেতে যেমন ব্যার্থ থাকেন৷ তেমন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে কাজ করে স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রেও নিরাপত্তার অভাব তাদের কর্মদক্ষতাকে খাটো করে৷

বিবাহিত-অবিবাহিত সব নারীকেই তাই বাইরে বেড়িয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে পারিবারিক ও সামাজিক বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়৷ উচ্চবর্ণের মহিলাদের তুলনায় নিম্নবর্ণের মহিলাদেরকে বাইরে কাজের ক্ষেত্রে বেশী দেখা যায় সুতরাং সেখানে তাদের যথাযথ নিরাপত্তার অভাব থাকলে সেটাই তাদের উন্নতির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে৷ ভারতের মত উন্নয়নশীল দেশেও একই চিত্র৷ বরং দেখা যায় বাইরে কর্মরত মহিলারা নিজের সংসার সামলাতে অন্য মহিলাদের অর্থের বিনিময়ে কাজে নিযুক্ত করেন৷ অর্থাৎ আরও একটি মহিলার কর্মসংস্থান হয়৷ সুতরাং ঘরে-বাইরে সব জায়গায় কাজের ক্ষেত্রে নারীদের সাধারণ ভাবে অগ্রাধিকার দেওয়াটা এখন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে৷ নারীর গোলাপী রঙের প্রতীকিকে সম্মান জানানোর যথার্থতা এখানেই৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *